নাটোর চলনবিলাঞ্চলে জমে উঠেছে নৌকার হাট

বৃহত্তর পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটোর চলনবিলাঞ্চলে বিভিন্ন উপজেলায় গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে নদ-নদী খাল বিলে বর্ষার পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নৌকা তৈরি ও বিক্রির ধুম পড়েছে। একে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা। নতুন নৌকা তৈরির পাশাপাশি পুরাতন নৌকা মেরামতের কাজও চলছে।

সম্প্রতি কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে চলনবিল এলাকার বিভিন্ন মাঠগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা মাছ ধরায় নতুন আনন্দে মেতে উঠেছেন। এসব কারণে কদর বেড়ে যাওয়ায় জমে উঠেছে নৌকা বিক্রির হাটগুলো। বিশেষ করে তাড়াশ উপজেলার নওগাঁর হাটে বিক্রি হচ্ছে শত শত নৌকা।
নৌকা ক্রয়ে একদিকে সুফল পাচ্ছেন এলাকার পানিবন্দি মানুষ। অপর দিকে নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেক কাঠমিস্ত্রি। যেসব মিস্ত্রিরা শুষ্ক মৌসুমে কাজের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরি ও মেরামতে।

বৃহত্তর চলনবিল এলাকার নওগাঁর হাটে নৌকা বিক্রি করতে আসা তাড়াশ উপজেলার মহেশরৌহালী গ্রামের মো. নাইম হোসেন ও আলহাজসহ অনেকে বলেন, আমরা কৃষক মানুষ। বর্ষায় আমাদের মাঠ ডুবে যাওয়ায় আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি। বর্তমানে বিভিন্ন গ্রামে নৌকার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা নৌকা বিক্রির পেশায় নিয়োজিত হয়েছি। শুধু নওগাঁ নয় রাণীনগর, নাটোরের সিংড়া, বাঘাবাড়ি, বেড়া এবং বিভিন্ন এলাকার লোকজনও আমাদের নৌকা ক্রয় করতে আসেন।
তারা আরো জানান, বর্তমানে কাঠ-বাঁশের দাম বেশি এবং মিস্ত্রি মজুরি বেশি হওয়ায় খুব বেশি লাভ না হলেও যা হয়, তা দিয়ে কোনো রকম সংসারের চলে যায়।

উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের মহেশরৌহালী গ্রামের আতা মিস্ত্রি বলেন, বর্ষার পানি নদ-নদী ও খাল-বিলে প্রবেশ করার পর আমাদের এলাকায় নতুন নৌকা তৈরি ও পুরাতন নৌকা মেরামতের ধুম পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজ চলছে।

উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের হামকুড়িয়া গ্রামের নৌকা তৈরির কারিগর হবিবর, মুছা ও আলম বলেন ১২-১৫ হাত নৌকা তৈরিতে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা। আর বিক্রি হয় সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। ১০-১২ হাত নৌকা তৈরি করতে খরচ হয় সাড়ে ২৫ শো থেকে ৩ হাজার টাকা। আর বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকা থেকে-৩৫ শো টাকা পর্যন্ত। এছাড়া কাঠের প্রকারভেদে নৌকার দাম কম-বেশি হয়ে থাকে।

তারা বলেন, ধান কাটার ধুমে হাটে-বাজারে নৌকার ক্রেতারা কম আসে। তাই নৌকা কেনা-বেচা আর আগের মতো হয় না। তাই আমাদের বাপ-দাদার আমলের ব্যবসা কোনো রকমে ধরে রেখেছি। বর্ষার পানি বাড়তে থাকলে নৌকার বেঁচা-কেনা বেশি হয়।