নিউইয়র্কের গভর্নর নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করলেন ক্যাথি হোকুল

নিউইয়র্কের গভর্নর নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করলেন ক্যাথি হোকুল। রাত ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি ৫৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান লি জেলডিন পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট। ডেমোক্র্যাট রাজ্য নিউইয়র্কে ক্যাথি হোকুল জিতবেন, এমনটি স্বাভাবিক ঘটনা।

কিন্তু ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটের হিসাবে মোটা দাগে ‘ভাগ’ বসিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী লি জেলডিন।

বহু বাংলাদেশি আমেরিকানের পছন্দের তালিকায় ছিলেন এই রিপাবলিকান। এদিকে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় নিউইয়র্কের প্রথম নারী গভর্নর হিসাবে ইতিহাসে নাম লেখালেন ক্যাথি হোকুল।

লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসাবে তিনি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোর রানিং মেট ছিলেন। কথিত নারী কেলেঙ্কারির অপবাদ নিয়ে ক্যুমো পদত্যাগ করলে শিঁকে ছেঁড়ে ডেমোক্র্যাট হোকুলের।নিউইয়র্কে অব্যাহত বন্দুক সন্ত্রাস, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, আবাসন সঙ্কট, করোনা পরিস্থিতি, গর্ভপাতের পক্ষে অবস্থান এবং রোহিঙ্গা আশ্রয়দানসহ বিভিন্ন কারণে ভালো নেই নিউইয়র্কবাসী।

এ কারণে বিকল্প খুঁজছিলেন এই রাজ্যের মধ্যবিত্তরা। এ কারণে ক্যাথি হোকুলের সঙ্গে লড়াইয়ে শক্ত অবস্থানে ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী লি জেলডিন। বাংলাদেশি আমেরিকানদের অভিযোগ, বর্তমান গভর্নর ক্যাথি হোকুল মধ্যবিত্তের দিকে নজর দেননি। তিনি নিউইয়র্ক রাজ্যে ধনীদের আরো ধনী করছেন। মাঝখান থেকে মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে। বিশেষ করে আবাসন সঙ্কট, নিয়ন্ত্রণহীন বাড়ি ভাড়া এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন দুঃসহ হয়ে পড়েছে। নাগরিক হিসাবে রাজ্য সরকার থেকে যেটুকু সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। একটি পরিবারের স্বামী-স্ত্রী কাজ করে বাড়ি ভাড়ার অর্থ জোগাড় করতে পারলেও সংসারের অন্যান্য খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।

৮ নভেম্বর নির্বাচনে এসব বিবেচনায় নিয়েছে অনেক পরিবার। শুধু বাংলাদেশি আমেরিকান নন, অন্যান্য কমিউনিটিও এসব বিষয় পুনর্বিবেচনা করেছে। ফলে নির্বাচনে জয়ী হলেও কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হয়েছে ক্যাথি হোকুলকে।

নিউইয়র্ক স্টেটের বোর্ড অব ইলেকশনের প্রকাশিত আংশিক ফলাফলে দেখা গেছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ও বর্তমান গভর্নর ক্যাথি হোকুল পেয়েছেন মোট ভোটের ৫৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ তিনি পেয়েছেন ২৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৮ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী লি জেলডিন পেয়েছেন মোট ভোটের ৪৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ তিনি পেয়েছেন ২০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৬ ভোট। প্রাপ্ত ফলাফলে নিশ্চিত জয়ের পথে রয়েছেন ক্যাথি হোকুল। তার ডেপুটি হিসাবে আছেন অ্যান্তেনিও ডেলগাডো। পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশ হতে আরো সময় লাগতে পারে। এদিকে স্টেটের অন্যান্য পদে বিশেষ করে স্টেট কম্পট্রলার পদে থমাস নেপোলি, স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল পদে লেটিশিয়া জেমস, ইউএস সিনেটর পদে চাক শুমার, ইউএস কংগ্রেস সদস্য পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির রবার্ট জেমারম্যান, লরা গিলেন, গ্রেগরি মিকস, গ্রেস মেং, নাইডিয়া ভেলাসকেজ, হাকিম জেফরি, ইভাট ক্লার্ক, ড্যানিয়েল গোল্ডম্যান, জেরল্ড ন্যাডলার, আর্দিয়ানো এসপ্লিয়া, ওকাসিও কর্টেজ, রিচি টরেস, জামাল বোম্যান, পেট রায়ান, পল টংকো, ফ্রান্সিস কনোলি, জোসেফ মরেল ও ব্রায়ান হিগিঞ্জ জয়ের পথে রয়েছেন।
অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী অ্যান্ড্রু গারবারিনো, নিকোল মালিওটাকিজ, মাইক ললার, মারকাস মলিনারো, এলিস স্টেফানিক, নিক ল্যাওয়ার্দি ও ক্লদিয়া টেনি এগিয়ে রয়েছেন। নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর হিসাবে বাংলাদেশিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ জন ল্যু, জেসিকা রামোস, রোক্সান প্রসাদ, জোসেফ অ্যাডাবো, কেভিন পার্কার, লুইস সেপুলভেদা, নাথালিয়া ফার্নান্ডেজ ও টবি অ্যান নিশ্চিত জয়ের পথে রয়েছেন।

নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার হিসাবে বাংলাদেশিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ডেভিড ওয়েপ্রিন, জেসিকা গঞ্জালেস রোহাস, জোহরান মামদানি, জেনিফার রাজকুমার, ক্যাটালিনা ক্রুজ, কারিন রেজ ও জিনাস সিলিটি নিশ্চিত জয়ের পথে রয়েছেন।