নির্বাচনের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে রিজার্ভ চুরির মামলা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনতে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আন্তর্জাতিক আদালতের আইন অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতির দাবি তুলে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশকে মামলা করতে হবে। তবে, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় থাকলেও ৩০ ডিসেম্বরের আগেই এই মামলা করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক ব্রিফিং করে বিষয়টি জানাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।-খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের আগে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় গত সেপ্টেম্বর মাসেই। নির্বাচনি প্রচারণায় কেউ যেন বলতে না পারে, যে রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনও উদ্যোগ ছিল না। নির্বাচনের আগে কেন মামলার সিদ্ধান্ত এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট ৩০ ডিসেম্বর। এর মধ্যে নির্বাচন পড়লো কিনা, সেটা অন্য বিষয়।

জানা গেছে, মামলার প্রস্তুতি হিসেবে পরিচালনার ব্যয় নির্ধারণ ও এফআইআর দায়েরের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আদালত ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া হ্যাকিংয়ের ঘটনার পক্ষে তথ্য-প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ হচ্ছে। পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কোনও তথ্য থাকলে তাও সরবরাহ করতে বিশ্বের সব দেশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এরআগে, গত এপ্রিল মাসে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলা করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় অর্থমন্ত্রী আবুল আবদুল মুহিতও ফিলিপাইনের আরসিবিসি’র বিরুদ্ধে মামলা করার হুকুম দিয়েছিলেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের আদালতে সিভিল ও ক্রিমিনাল দুটি মামলা হয়েছে। এর পরিচালনা ব্যয় ও সব ধরনের আইনি সহায়তা করছে ওই দেশের সরকার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও আইনজীবী নিয়োগ করতে হয়নি।

এরআগে, গত ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথও বাংলা ট্রিবিউনকে আভাস দিয়েছিলেন আগামী ৩০ ডিসেম্বরের আগেই মামলা হতে পারে। ওই দিন দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, ‘গভর্নর ফজলে কবিরের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি হাতে নেওয়া হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, গত ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার এক হ্যাকারের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ করেছে এফবিআই। যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার পার্ক জিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে।এই ঘটনায় বাংলাদেশের চুরি যাওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে বেশি আশাবাদী হয়ে উঠেছে। যদিও এর আগে বাংলাদেশ আশাবাদী হয় ফিলিপাইনের আদালতে ফিলিপাইনের আরসিবিসি জুপিটার স্ট্রিট শাখার সাবেক ম্যানেজার মায়া দেগুইতোর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস শুরু হওয়ায় ।

জানা গেছে, চুরি যাওয়া প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার (২৪৪ কোটি টাকা) গেছে সোলারি ক্যাসিনিওতে। এই পরিমাণ অর্থ ফিলিপাইনের সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। আর ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার এবং আরসিবিসি ব্যাংকে জমা ৭০ হাজার ডলার ফেরত পাওয়া গেছে। এখনপর্যন্ত সন্ধান পাওয়া যায়নি ১ কোটি ৪২ লাখ ডলারের। বাকি অর্থের মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার আছে ফিলিপাইনের রেমিটেন্স কোম্পানি ফিলরেমোর হিসাবে। ৬০ লাখ ডলার এখনও রয়েছে কিম অং-এর কাছে। এছাড়া ১২ লাখ ডলারের সন্ধান পাওয়া গেছে কিম ওয়াংয়ের দু’জন কর্মচারীর ব্যাংক হিসাবে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে সংরক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাইবার চুরির এই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। ওই সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ঢাকায় মামলা করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি আড়াই বছরেও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। পুরো বিশ্বে আলোচিত এই সাইবার চুরির পেছনে কারা ছিল, তা জানা যায়নি এখনও।

বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা এই রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি অর্থমন্ত্রীর কাছে অনেক আগে প্রতিবেদন জমা দিলেও এ পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়নি।