নীলফামারীতে সমিতির আড়াঁলে প্রতারণা! এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি, থানায় সোপর্দ

কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের মূল হোতা পঞ্চগড় পাউবো’র কার্যসহকারী ও ডোমার বাজার ভোগ্যপন্য সমবায় সমিতি লিঃ এর পরিচালক মাহমুদুল হাসান মামুনকে গণপিটুনি দিয়ে থানায় সোপর্দ করেছে সর্বশান্ত পরিবারের সদস্য ও বিক্ষুপ্ত জনতা বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জানা যায়, গত শনিবার বার হাজার হাজার জনতার রোষানল থেকে বাঁচতে থানায় আশ্রয় নেওয়া থানায় মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়ে আবারো পরের দিন রোববার ১২ ডিসেম্বর ঐ অফিসে গেলে বিক্ষুপ্ত জনতা ও সর্বশান্ত পরিবারের সদস্যরা মাহমুদুল হাসান মামুনকে ঘেরাও করে রাখেন। অথচ প্রতারক চক্রের এই সদস্যরা এক কোটি টাকা ফেরত দিবে মর্মে মুচলেকা নিয়ে ছাড়া পান ডোমার থানা থেকে। কিন্তু তারপরও প্রতারক চক্রটি থেমে নেই। আবারও ঐ ব্যবসা চালাতে ঘটনার পরের দিনেই আবারও প্রতারক চক্রের মূল হোতা মামুন ডোমার বানোয়ারী মোড়ের দক্ষিনে কুইন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এর ভিতরে থাকা কোম্পানীটির অফিসে যাওয়ার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় আবারও হাজার হাজার বিক্ষুপ্ত জনতা ঐ অফিসটি ঘেরাও করে ফেলে। এ সময় খোয়া যাওয়া টাকা ফেরতের চাপ দিতে থাকলে ঘেরাও হয়ে থাকা এই চক্রের হোতা মামুন সর্বশান্ত মানুষদের বলেন, কিসের টাকা দিবো। আমি তো টাকা দিয়ে দিছি। আপনাদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে রাজশাহী ও বগুড়ার লোক। গণপিটুনীর শিকার মামুনকে রক্ষাথে ২০/৩০ জন স্থানীয়বাসিন্দা তাকে বিক্ষুপ্ত জনতা কবল থেকে রক্ষা করে ডোমার থানায় সোর্পদ করেন। এ সময় পিছু নেয় সর্বশান্ত পরিবারের সদস্যরা। ভূক্তভোগীদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে ডোমার থানা চত্তর। তারা চিৎকার করতে থাকে টাকা চাই, টাকা ফেরত চাই, ফেরত দিন আমাদের টাকা। এ সময় সকলকে টাকা ফেরত দেওয়া হবে মর্মে আশ্বস্ত করে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান তাদের ঘন্টাব্যাপি বুঝিয়ে বিদায় দিয়ে মাহমুদুল হাসান মামুনকে জনতার হাত থেকে রক্ষা করে নিপারত্তা দিয়ে থানায় বসিয়ে রাখেন গভীর রাত পর্যন্ত। স্থানায়িরা জানান, প্রতারক মামুনকে পুলিশ জানিয়েছে দ্রুত পালিয়ে যাওয়া প্রতারকের ঠিকানা ও তাদেরকে হাজির না করলে সকল দায়ভার মোঃ মামুন হাসান মালিক (আদম সুফি) ও মাহমুদুল হাসান মামুনকেই কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে নির্ধারিত সময়েই। পরবর্তীতে থানার হেফাজত থাকা মামুনকে গভীর রাতে তার বাড়ীতে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন থানা পুলিশ। এদিকে এই ঘটনা শুনে অপর প্রতারক রোববার রাতেই মোঃ মামুন হাসান মালিক ওরফে আদম সুফি হৃদযন্ত্র ক্রিয়াবন্ধ রোগে আক্রান্ত হলে তাকে সাথে সাথে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ভর্তি করানো হয়।

পূর্বের ঘটনা :
গত ১২ ডিসেম্বর শনিবার হাজার হাজার ভুক্তভোগী ও সাধারণ জনতা ঘেরাও করলে পালিয়ে যায় প্রতারক চক্রের সদস্যরা। এ সময় বিক্ষুপ্ত জনতার রোষানল থেকে নিজেদের বাঁচতেই ঐ চক্রের মূল হোতা ও পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য সহকারী আশ্রয় নেয়। এ ঘটনায় ডোমার থানায় গিয়ে ভীর করে বিক্ষুপ্ত জনতা তাদের খোঁয়া যাওয়া টাকার দাবীতে। ডোমার থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোনোয়ার হোসেন ও উপজেলা সমবায় অফিসার নুরুজ্জামান খাঁনকে খবর দিলে তাৎক্ষনিক থানায় ছুটে আসেন। ভুক্তভোগীর খোঁয়া যাওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য থানায় আশ্রয় নেওয়া উক্ত ব্যক্তিদ্বয় ০১ (এক) কোটি টাকা প্রত্যেকে পঞ্চাশ লাখ টাকা করে সাত দিনের মধ্যে ফেরত দিবে মর্মে চেক ইস্যু করে সমবায় কর্মকর্তার নামে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যাবস্থা নেওয়া যাবে মর্মে মুচলেকা নেয়া হয় । এই প্রতিশ্রæতিতে মুচলেকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আরো জানান, তারা জনতার ধাওয়া খেয়ে আত্মরক্ষার জন্য থানায় আশ্রয় নিয়েছিলো। তাদের দুইজনকেই নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। এভাবেই “ প্রতারক শাকিল (বগুড়া) ও মাহবুব ( রাজশাহী) উক্ত দুই ব্যাক্তিসহ মামুন (ডিমলা) ও মালিক ওরফে আদম সূফি (ডোমার) এই ৪ জন মিলেই উক্ত সমিতির রেজিষ্ট্রেশন পাওয়ার পূর্ব থেকেই এ ব্যাবসা শুরু করেছিলো। পরবর্তীতে তাদের প্রতারণা ঢাকতেই তড়িঘড়ি করে উক্ত সমিতির রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে পুরোদমে প্রতারণায় মগ্ন হয়ে পড়ে তারা। এরই ফাঁকে তাদের ব্যবসার কোন কুল কিনারা না পেয়ে নুরুজ্জামান রুপক ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোষ্ট করা হয় ডোমারবাসীকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে। স্টাটাসটি পোষ্ট করা হলেই নড়ে চড়ে বসে প্রতারক চক্রটি। পোষ্টকারী ও কমেন্টকারীদের তারা হুমকী দিতে থাকে আইসিটি মামলার। অথচ তারা ইতিমধ্যে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ধরা পড়ার ভয়ে শাকিল ও মাহবুব ওই নারীকে নিয়ে পালিয়ে। টনক নড়ে স্থানীয় ভূক্তভোগীদের। ঘেরাও করে তারা অফিস টাকার দাবীতে। দুইজন পালিয়ে আশ্রয় নেয় থানায় সেখান থেকে মুচলেকা দিয়ে বের হয়ে তারা উদর পিন্ডি বুদোর ঘারে চাপানোর চেষ্টায় ব্যস্ত তারা।

ব্যাবসার যে পলিসি ছিলো প্রতারক চক্রটির
আপনি তাদের ৫০ হাজার টাকা দিবেন, তারা আপনাকে ৭ দিনের মধ্যে একটা ভিশন/ওয়ালটন/অন্যকোনো ফ্রিজ/রেফ্রিজারেটর দিবে এবং ঐ ৫০ হাজার টাকাও ফেরত দিবে। আবার আপনি ১ লাখ টাকা দিবেন, তারা আপনাকে একটা অঢ়ধপযব জঞজ ১৬০ পপ বাইক দিবে এবং কিছুদিন পরে ঐ ১ লাখ টাকাও দিয়ে দিবে! চক্রটি টার্গেট করছে মহিলাদের। প্রথমে আটা, ময়দা, সুজি, তেল জাতীয় দ্রব্যাদি দিত। এরপর গ্যাসের চুলা, রাইস কুকার, ফ্রিজ দেয়া শুরু হল। ৫০ হাজার টাকা কেউ কোম্পানিকে দিলে একটা ভিশন ব্রান্ডের রেফ্রিজারেটর দিচ্ছিল। এবং ৩/৭ দিন পর বিনিয়োগকৃত ঐ পঞ্চাস হাজার টাকা সাথে ৩০% সহ ফেরত দিচ্ছে মোট ৬৫ হাজার টাকা। তবে সাথে কোন কাগজ দেয়নি। এরপর শুরু করেছে বাইক দেওয়া।
১ লাখ টাকা দিলে তিন দিন পর অঢ়ধপযব জঞজ ১৬০পপ বাইক দিচ্ছে। সাথে এক মাস পর ১ লাখ টাকা সাথে ৩০% সহ ফেরত ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। শোরুমে বাইকের যার মূল্য ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, তবে বাইকের সাথে কোন কাগজ দেয়নি।
এর পর বাম্পার অফার ৪ লাখ টাকা দিলে ৩ দিন পর দুইটি অঢ়ধপযব জঞজ ১৬০পপ বাইক,৭ দিন পর আবারো দুই টি এবং ১৫ দিন পর আরো দুই টি মোট -৬ টি বাইক দিচ্ছে। সাথে এক মাস পর ৪ লাখ টাকাসহ সাথে ৩০% মোট ৫ লাখ ২০হাজার টাকা ফেরত।
আবার বিভিন্ন দিন বিভিন্ন ভাবে হটাৎ করে বাম্পার অফার দিচ্ছে ৯ হাজার টাকায় ৩ দিন পর ৬৫ লিটার সোয়াবিন তেল ও ১৫ দিন পর ৩০%সহ ৯ হাজার টাকা ফেরত। ১ ঘন্টার অফার ৯০ হাজার টাকা দিলে ২ টি এ্যাপাসি আরটিআর ১৬০ সিসি বাইক সাথে এক মাস পর টাকা ফেরত।
এভাবেই তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছিলো। ১১ কোটি ৬৫ লাখ প্রতি মাসে তাদের হাতে থাকবে সব ব্যয় করেও। প্রতারক এই চক্রটি মাত্র ৬ মাস থেকে ১ বছর শান্তি মত ব্যবসা করতে পারলেই তাদের কেল্লাফতে। জনশ্রুতি আছে ডেস্টিনি,টার্কি মুরগীসহ নানা ব্যবসায় খুলে এই চক্রটি মানুষকে ইতিপূর্বেও লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। মাহমুদুল হাসান মামুন ডিমলা স্বপ্ন সমবায় সমিতি লিঃ খুলে সভাপতি ও নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। যার রেজিঃ নং-নীল-২৯/১৮। তাং ২৫/০২/২০১৮ইং। কে এই পাইবো’র মাহমুদুল হাসান মামুন সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হবে শিঘুই চোখ রাখুন খবরের কাগজে।