নেত্রকোণায় গভীর রাতে প্রেমিকের সঙ্গে ফোনে কথা বলায় মেয়েকে হত্যা করল মা

মোবাইল ফোনে গভীর রাতে প্রেমিকের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ না করায় উত্তেজিত হয়ে ১৮ বছর বয়সী মেয়েকে হত্যা করেছেন মা।

নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের দরুণ বৈরাটি গ্রামের। ১ বছর ৯ মাস আগের ওই ঘটনায় মঙ্গলবার এই মাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

পুলিশের কাছে ও আদালতে মেয়ে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন মোছা. জোসনা বেগম (৪৭) নামের এই মা। তিনি দরুণ বৈরাটি গ্রামের মৃত এমএল মিয়ার স্ত্রী।

জোসনা বেগম বলেন, ‘ঘটনার দিন রাত প্রায় সাড়ে ৩টা। মেয়ে সুমী কাউছার ফোনে তার প্রেমিকের সঙ্গে কথা বলেই চলেছে। ফোনে কথা বলতে নিষেধ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারধর করে মেয়ে। এরকম ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। ঘরের আসবাবপত্রও ভাংচুর করেছিল কয়েকদিন। ওই রাতে মেয়ের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছি।’

এদিকে হত্যার পর অসুস্থতায় মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার চালান জোসনা বেগম। পরে পুলিশ অপমৃত্যু মামলা করে মেয়ের মরদেহের ময়নাতদন্ত করে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি সামনে আসে। পুলিশ বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করে। এই মামলা দায়েরের ১ বছর ৯ মাসের মাথায় এসে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মেয়েকে হত্যার বিস্তারিত খুলে বলেন জোসনা।

েনেত্রকোণা জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুর রহমান বলেন, ‘গত ৫ মে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় মেয়েকে হত্যার পুরো বর্ণনা দেন জোসনা বেগম। পরে তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার নেত্রকোণা বিচারিক হাকিম আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতেও জোসনা বেগম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠান।’

হত্যার বিষয়ে জোসনা বেগমের দেওয়া বর্ণনার বরাতে জেলা পুলিশের মুখপাত্র বলেন, ‘ঘটনার দিন ২০২২ সালের ২২ আগস্ট রাত প্রায় সাড়ে ৩ টায় সুমী ফোনে কথা বলার সময় তার মা জোসনা বেগম বাধা দেন।এতে দুজনের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। এর জেরে জোসনা বেগম মেয়েকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে জোসনা বেগম পুলিশকে জানান, রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে বসতবাড়ির পাশে টয়েলেটে যায় মেয়ে।

সেখান থেকে মেয়ে চিৎকার দিলে জোসনা বেগম দৌড়ে গিয়ে সুমীকে ঘরে আনেন। তখন ‘‘বুক জ্বলছে’’ বলে ডাক চিৎকার করার এক পর্যায়ে সুমীর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পূর্বধলা থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি সুরতহাল প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোণা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সুমীকে শ্বাসরোধে হত্যার উল্লেখ করা হয়। পরে থানার এসআই মো. হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন কৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেও ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন সম্ভব হচ্ছিল না। পরে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে পর্যায়ক্রমে জোসনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মেয়ে সুমী কাউসারকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

হত্যার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, সুমী কাউসার অবাধ্য হয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে একাধিকবার তাঁকে শারীরিক আঘাত করাসহ ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছিল। নিষেধ করা স্বত্বেও জনৈক ছেলের সঙ্গে মোবাইলফোনে কথা বলত। ঘটনার দিনও গভীর রাতে মোবাইলফোনে কথা বলছিল।