নৌবাহিনীতে যুক্ত হচ্ছে দুটি যুদ্ধ জাহাজ ও টাগবোট

আগামীকাল বুধবার থেকে অত্যাধুনিক দুটি যুদ্ধ জাহাজ ও সাবমেরিনের জন্য নির্মিত দুটি টাগবোট যুক্ত হচ্ছে নৌবাহিনীতে। প্রায় আটশ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক এ জাহাজ ও টাগবোট (ছোট শক্তিশালী নৌযান) নির্মাণ করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড। নদী ও সমুদ্রে পরীক্ষামূলক চলাচল শেষে দুর্গম ও নিশান নামের জাহাজ দুটি এবং টাগবোট কমিশনিং করতে বুধবার খুলনায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

খুলনা নৌবাহিনী সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বুধবার বেলা ১১টায় খালিশপুরস্থ তিতুমীর নেভালে অবস্থান করবেন। তিতুমীরের নেভাল জেটিতে নবনির্মিত দুর্গম ও নিশান নামের যুদ্ধ জাহাজ দুটি এবং টাগবোট কমিশনিং করবেন। দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্তকরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। এ অনুষ্ঠানে সামরিক কর্মকর্তা ও সুধীজনদের উদ্দেশ ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে তার। তিনি তিতুমীরে নৌবাহিনীর অনুষ্ঠান শেষে নৌ ঘাঁটিতে জোহরের নামাজ আদায়, খাবার ও বিশ্রাম নেবেন। বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

১৯৯৯ সালের ৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার খুলনা শিপইয়ার্ডকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তন্তর করে। আর তখন থেকে আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ নির্মাণ কারখানা হিসেবে গড়ে তোলা হয় খুলনা শিপইয়ার্ডকে।

২০১১ সালের ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা শিপইয়ার্ডে সর্বপ্রথম দেশের মাটিতে ৫টি যুদ্ধ জাহাজ পেট্রল ক্রাফট নির্মাণের কিল লেইং অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। ২০১৩ সালের মধ্যে সেই পাঁচটি পেট্রল ক্রাফট নির্মাণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে এই প্রতিষ্ঠানটি। নৌবাহিনীর জন্য লার্জ পেট্রল ক্রাফট নামের দুটি যুদ্ধ জাহাজ চীন থেকে আমদানি করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয় নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে শিপইয়ার্ডের পক্ষ থেকে খুলনায় জাহাজ নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নৌবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সুপারিশে এলপিসি নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় দেশের জাহাজ তৈরির কারখানা শিপইয়ার্ডকে।

জাহাজ নির্মাণের জন্য ২০১৪ সালের ৩০ জুন নৌবাহিনীর সঙ্গে খুলনা শিপইয়ার্ডের চুক্তি হয় । প্রতিটি জাহাজের নির্মাণ জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা । এই ধরনের দুটি এলপিসি চীন থেকে তৈরি করতে খরচ হতো প্রায় এক হাজার কোটি।

খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর আনিছুর রহমান মোল্লা জানান, ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় দেশে জাহাজ নির্মাণের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। খুলনা শিপইয়ার্ডের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর ২৪ মাস অক্লান্ত পরিশ্রমে নির্মাণ শেষ হয়েছে দেশে নির্মিত প্রথম এন্টি সাবমেরিন লার্জ পেট্রল ক্রাফট দুটির। ইতোমধ্যেই দুর্গম ও নিশান নামের জাহাজ দুটি নদী ও সমুদ্রে পরীক্ষামূলক চলাচল শেষ হয়েছে। খুলনার তিতুমীরের নেভাল জেটিতে বুধবার নবনির্মিত জাহাজ গুলি নৌবাহিনীতে কমিশনিং (সংযুক্ত) করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড এলপিসি জাহাজ প্রকল্পের প্রধান কর্মকর্তা কমান্ডার এম আর রাশেদ বলেন, বড় আকারের অত্যাধুনিক লার্জ পেট্রল ক্রাফট প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৬৪ দশমিক ২ মিটার এবং প্রস্থ ৯ মিটার। এর গভীরতা ৫ দশমিক ১০ মিটার। সমুদ্রপথে ঘণ্টায় ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলবে। জাহাজে ৭০ জন এক সঙ্গে থাকতে পারবেন। চীনের যুদ্ধজাহাজ বিশেষজ্ঞরা এতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, লার্জ পেট্রল ক্রাফট হলেও এগুলোতে অধিকাংশ সুবিধা থাকবে। থাকবে স্বয়ংক্রিয় মিসাইলসহ অত্যাধুনিক সব যুদ্ধাস্ত্র। আরও থাকবে একটি মাল্টি রোল গান, একটি সিঙ্গেল ব্যারেল গান, দুটি ট্রিপল টুবার টর্পেডো লাঞ্চার, দুটি নেভিগেশন রাডার, একটি এয়ার অ্যান্ড সারফেস সার্চ রাডার, একটি ট্রাকিং রাডার এবং একটি হাল মাউন্টেড সেলার। এই এলপিসি শত্রুপক্ষের সাবমেরিন শনাক্ত এবং তার ওপর আক্রমণ করতে সক্ষম। এটি দিয়ে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় টহলও দেয়া যাবে।।

কমান্ডার এম আর রাশেদ বলেন জানান, দেশে তৈরি এ জাহাজ দুটি কমিশনিংয়ের (সংযুক্তির) মাধ্যমে বাড়বে নৌবাহিনীর সক্ষমতা। আধুনিক সমর অস্ত্র সজ্জিত এ জাহাজ যুক্ত হয়ে নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষে আগামী ১০ বছরের ভিশন নিয়ে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে নৌবাহিনীর।