পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ‘টিউলিপ ফুল চাষ প্রকল্প’ দেখতে টিকিটের চড়া দামে অতিষ্ঠ পর্যটক

সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের দর্জিপাড়া নামক এলাকায় অবস্থিত ‘টিউলিপ ফুল চাষ প্রকল্প’ দেখতে অনুমোদনহীন ‘দর্জিপাড়া টিউলিপ সমিতি’র টিকিটের নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।

ভিনদেশীয় টিউলিপ ফুল দেখতে আসা পর্যটকরা এই অভিযোগ তুলেছেন। এতে পর্যটকরা চড়া দামে টিকিট ক্রয়ে ক্ষোপ প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখতে ও জানতে পারা যায়, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সহযোগীতায় এবং ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এর বাস্তবায়নে উপজেলায় দ্বিতীয় বারের মতো চাষ করা হয়েছে এই টিউলিপ ফুল। গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে দর্জিপাড়া-শারিয়ালজোত দুটি গ্রামে আটজন প্রান্তিক নারী কৃষককে নিয়ে ৪০ হাজার টিউলিপ চাষ শুরু করেন এবার দ্বিতীয়বারের মতো ২০জন কৃষক-কৃষাণী চাষ করেছেন এই ভিনদেশী ফুল।

এতে পর্যটন এলাকায় টিউলিপ ফুলের বাগান সৃষ্টি হওয়ায় পর্যটনের আকর্ষণও বেড়েছে। এই টিউলিপ দেখতে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। কেউ সেলফি তুলছেন। আবার কেউ ফুল কিনছেন। গত ১০ জানুয়ারি এক লাখ টিউলিপ ফুলের বাল্ব (বীজ) রোপণ করা হয়। রোপণের ১৫-১৬ দিনের পরিচর্যায় ফুলের কলি আসে। ২০-২৪ দিনের মধ্যেই ফুল ফুটতে শুরু করে। অধিকাংশ গাছে ফুল ফুটেছে। কয়েকদিনের মধ্যে বাকি গাছেও ফুল ফুটবে।

রংপুর থেকে দেখতে আসা এক পর্যটক বলেন,আমরা যারা ফ্যামেলি নিয়ে ৮/১০জন আসছি তারপক্ষে বারডেম হয়ে যায়, টিকিটের মূল্যটা যদি ২০-২৫ টাকা হইতো তাহলে সবার জন্য সামঞ্জস্য হইতো। আর আমার কাছে যেটা মনে হচ্ছে যে, এটা সকলের জন্য টাপ হয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়টা যদি কর্তৃপক্ষ দেখে তাহলে আরও এটা পরিদর্শনের জায়গাটা আরোও ভালো হবে। আর মানুষ মনে করবে না হলে এটা চিটিং হচ্ছে এখানে, শুধু ফুল দেখার জন্য ৫০টাকা এটা বেশি হয়ে যায়। আমরা আসছি রংপুর থেকে, রংপুর থেকে প্রায় আমরা ৩শ’জন আসছি, কিন্তু দেখে গেলাম এরপর আমরা কাউকে পাঠাবো না, যদি এরকম থেকে থাকে।’ হুবহু ভিডিও সাক্ষাতের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

জানা যায়, দেখতে আসা পর্যটকদের নিকট প্রবেশ টিকিট বিক্রি করে ইএসডিও দৈনিক গড়ে আয় করছেন ২০ হাজার টাকা।

টিকিট বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, গত বছর তিন জায়গায় এই টিউলিপ ফুলের চাষ ছিল এবার ইএসডিও থেকে ২০জন সদস্য মিলে এক জায়গায় এই টিউলিপ ফুল চাষ প্রকল্প করেছেন। তিনি বলেন, বিশ জন সদস্য প্রত্যেকে এক লাখ করে বিশ লাখ টাকা ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) তেঁতুলিয়া কর্তৃপক্ষকে দিযেছেন।

এতে দুই মাস ধরে তাদের পরিশ্রম ও ব্যয়ের খরচ তুলতে এই টিকিট বিক্রি করছেন। কে এই টিকিটে টাকা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, ইএসডিও। এই টাকার ভাগবাটোয়ারা কাউকে দিতে হচ্ছে কিনা? জানতে চাইলে বলেন, তাঁরা (উদ্যোক্তারা) নিজেরাই ভাগবাটোরা করেন। তিনি আরোও বলেন, এক সপ্তাহ ধরে টিকিট নেয়া হচ্ছে, গড়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। এই কার্যক্রম ৩০-৩৫দিন চলবে।
এদিকে উদ্যোক্তা মনোয়ারা জানান, তাঁরা (উদ্যোক্তাগণ) ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) তেঁতুলিয়া কর্তৃপক্ষকে ২২ লাখ টাকা দিয়েছেন। তিনি আরোও বলেন, তাদের এই টিউলিপ ফুল অর্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় প্রতি ফুল ১০০ টাকা থেকে এর উপরে যত পারেন বিক্রি করছেন। তবে লোকাল প্রতি ফুল ৫০-১০০টাকা করে বিক্রি করেন।

এদিকে ইএসডিও প্রোগ্রাম ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর ও প্রকল্পের সম্নয়কারী মো. আইনুল হক বলেন, কৃষকরা একটি বাল্ব বা বীজ নেদারল্যান্ডস থেকে নিয়ে আসতে ৫৫টাকা পড়েছে।

তাদের পরিশ্রমিক ব্যয় সব মিলিয়ে গতবার ১০০টাকা টিকিটের মূল্য ছিল এবার ৫০টাকা করা হয়েছে। যেহেতু টিউলিপ আমরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছি ঠাকুরগাঁও সদর ইউএনও ও ঠাকুরগাঁও ডিসি মহোদয় এবং তেঁতুলিয়া ইউএনও মহোদয় দেড়শ টাকা নিতে বলছিলেন। আমরা সেটা না করে ৫০টাকা করেছি।

গত মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩) প্রকল্প নিয়ে জেলা-উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার। তিনি বলেন এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক পত্র পত্রিকাতেও প্রকাশ পেয়েছে। বলা হয়, টিউলিপ চাষে এবার ব্যয় হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। বাল্ব বা চারার দাম, শেড নেট, ফেন্সিং নেট, রাসায়নিক সার, জৈবসার, কীটনাশক ও শ্রমের মূল্য ধরেই এই ব্যয় হয়েছে।

উপজেলা সমবায় অফিসার ফারুক হোসেন বলেন, দর্জিপাড়া টিউলিপ সমিতি নামে কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, টিউলিপ প্রকল্পে ইএসডিওর অনেক ব্যয় হয়েছে জানিয়েছেন। তবে পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে টিকিটের মূল্যের বিষয়টি তিনি দেখতে চেয়েছেন।