পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ২ কণ্যাশিশুর জন্য হলেও বাঁচতে চায় মৃত্যু পথযাত্রী বেল্লাল

পেশায় ছিলেন একজন নরসুন্দর, নিজ হাতের নিখুত কারুকাজে ক্রেতাদের সাজিয়ে দিতেন চাহিদানুযায়ী। এ কাজের নৈপুণ্যে বেশ সুনামও কুড়িয়েছিলেন তিনি। তবে ভাগ্যের নির্মমতায় সদা হাসোজ্জল এই মানুষটিই শারিরিক ভাবে লিভারসিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে আজ মৃত্যুপথযাত্রী।

ফলে চিকিৎসা সেবা নিয়ে কেবল বেঁচে থাকার জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে করছেন ভিক্ষাবৃত্তি। বলছেন নিজের জন্য না হলেও দুই কণ্যা শিশুর জন্য বাঁচতে চান তিনি। মো. বেল্লাল হোসেন (৩৫) উপজেলার লালুয়া ইউপির মাঝের হাওলা গ্রামের মৃত নওয়াব আলী হাওলাদারের পুত্র। ছোটবেলা থেকেই লিভারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগছিলেন। কিন্তু শৈশবে তেমন সমস্যা দেখা না দিলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে অসুস্থ হতে থাকেন। এরই মাঝে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবনে দুই কণ্যা সন্তানের জনক হন তিনি। তবে দীর্ঘ ৮ মাস যাবৎ দারুণভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পেট ফুলে ওঠায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। দরিদ্র ঘরে বেড়ে ওঠা এই যুবক বর্তমানে চিকিৎসার অর্থ যোগাতে করছেন ভিক্ষাবৃত্তি।

এমনকি তার প্রাণের সহধর্মীনিও স্বামীর চিকিৎসা ব্যয় যোগাতে অন্যের বাড়িতে করছেন গৃহপরিচারিকার কাজ। বেল্লাল জানান, বর্তমানে পেট ফুলে যাওয়ায় ঠিকমত হাটাচলা ও খাবারও খেতে পারছেন না। তার ভাষ্যমতে বরিশালের চিকিৎসক তাকে জানিয়েছেন, উন্নত চিকিৎসা নিয়েই কেবল বেঁচে থাকা সম্ভব। নয়তো যেকোন সময় তার মৃত্যু হতে পারে। তাই নিজের জন্য না হলেও ৮ বছর বয়সী জান্নাত ও ৪ বছরের কণ্যা হাবীবার জন্য বাঁচতে চান তিনি।

বেল্লালের স্ত্রী বিলকিস বেগম জানান, এক সময়ে সুখের সংসার জীবন কাটালেও দুর্ভাগ্যক্রমে স্বামীর অসুস্থতায় এখন তিনি অন্যের বাড়ির গৃহপরিচারিকা। তবুও চাইছেন বেঁচে থাকুক তার ভালোবসার মানুষটি। তাই সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

কলাপাড়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জুনায়েদ খান লেলিন জানান, বেল্লাল দীর্ঘদিন কলাপাড়া হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন, তবে তার ওষুধ কেনার সক্ষমতা না থাকায় তাকে সহায়তা করা হয়েছে। কিন্তু তার লিভার বেশ বড় হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তার দ্রুত অপারেশনের পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। না হয় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।

এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংঙ্কর চন্দ্র বৈদ্য জানান, ওই ব্যক্তির সাহায্যের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করবো। পরবর্তীতে সমাজ সেবার মাধ্যমে তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তবে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।