পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা : বেড়িয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করা নিয়ে বেড়িয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। বেনজির ভুট্টোকে খুন করেছিলেন আসিফ আলি জারদারি৷ সম্পর্কে যিনি তার স্বামী৷ চাঞ্চল্যকর এই অভিযোগটি করেছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন মিলিটারি শাসক পারভেজ মোশারফ৷

গতকাল দলের সোশ্যাল পেজে একটি ভিডিও পোষ্ট করেন পারভেজ মোশারফ৷ সেই ভিডিও বার্তায় তিনি একের পর এক বোমা ফাটান৷ বেনজির ভুট্টো হত্যার জন্য সরাসরি আসিফ আলি জারদারিকে দায়ী করেন তিনি৷ মোশারফের অভিযোগ, ক্ষমতার লোভেই পথের কাঁটা বেনজিরকে হত্যা করেছিলেন আসিফ আলি জারদারি৷ বেনজিরই তার প্রথম শিকার নয়৷ ভুট্টো পরিবারের আরেক সদস্য মুর্তাজা ভুট্টোকে জারদারি চক্রান্ত করে খুন করে৷

২০০৭ সালের ২৭শে ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন জঙ্গিরা খুব কাছ থেকে বেনজির ভুট্টোকে গুলি করে হত্যা করে৷ তার বহু বছর আগে ১৯৯৬ সালে করাচিতে বেনজিরের ভাই মুর্তাজাকে খুন করা হয়৷ সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে ছিলেন খোদ বেনজির ভুট্টো৷ মুর্তাজার স্ত্রী ও মেয়ে সেই খুনের জন্য জারদারির দিকে আঙ্গুল তোলে৷ যদিও ২০০৮ সালে তিনি বেকসুর খালাস পান৷

বেনজিরকে যখন খুন করা হয় তখন ক্ষমতায় ছিলেন পারভেজ মোশারফ৷ এই হত্যার জন্য ভুট্টো পরিবার প্রথম থেকেই মোশারফকে দায়ী করে৷ সেই দাবী খণ্ডন করে ভিডিও বার্তায় প্রাক্তন মিলিটারি শাসক বলেন, ‘‘প্রথমে একটা বিষয় ভাবা খুব জরুরি সেটা হল বেনজির মারা গেলে কার লাভ বেশি৷ সেই সময় আমি ক্ষমতায় ছিলাম৷ বেনজিরকে খুন করলে আমার ক্ষতি হত বেশি৷ এই ঘটনার পর আমার সরকার কঠিন অবস্থার মধ্যে পরে যায়৷’’

এরপরেই জারদারির বিরুদ্ধে তোপ দেগে মোশারফ বলেন, ‘‘বেনজির মারা গেলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হত আসিফ আলি জারদারি৷ বেনজির মারা যাওয়ার পর ক্ষমতায় আসে জারদারি৷ পাঁচ বছর প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি সক্রিয় ভাবে নিজের স্ত্রীর হত্যার তদন্তে সাহায্য করেনি কেন? প্রশ্ন তোলেন মোশারফ৷ পরে নিজেই সেই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘কারণ,জারদারি নিজেই তো দোষী’’৷

বেনজির হত্যার জন্য মোশারফকে দায়ী করে বলা হয় তিনি যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেননি৷ সেই অভিযোগ উড়িয়ে মোশারফ বলেন, বেনজির যে গাড়িতে ছিলেন সেটি বুলেট ও বোম প্রুফ ছিল৷ সেই গাড়ির ছাদ খোলার রাখার সিদ্ধান্ত আমার অন্তত ছিল না৷ ভাষণ শেষে বেনজির অক্ষত অবস্থায় গাড়িতে উঠে যান৷ গাড়িতে ওঠার পরেই তাকে কেউ ক্রমাগত ফোন করতে থাকে৷ ফোন নিয়েই হুড খোলা গাড়ি থেকে জনতার উদ্দেশ্য হাত নাড়াতে থাকেন৷ তখনই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ ঘটনার পর তার ফোনটি হারিয়ে যায়৷

বেনজির হত্যার মামলা নিয়ে আদালতের ভুমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মোশারফ৷ তাঁর অভিযোগ, বেনজিরের সঙ্গে সেই সময় গাড়িতে যারা ছিলেন তাদের কেন আদালত কোনও প্রশ্ন করেনি? বেনজিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন শাহেনশা৷ বেনজির খুন হওয়ার কিছুদিন পর শাহেনশাকে রহস্যজনক ভাবে হত্যা করা হয়৷ আরও অবাক করার বিষয় যে শাহেনশাকে খুন করেছিল সেও রহস্যজনক ভাবে মারা যায়৷ জারদারি ছাড়া আর কে করতে পারে এই সব?

গত সোমবার হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জারদারি বলেন বেনজির হত্যার মূল ষড়যন্ত্রী মোশারফ৷ পিটিশন দায়ের করে তিনি বলেন, একাধিক ব্যক্তির বয়ান এবং স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের তদন্তে উঠে আসা কিছু তথ্য প্রমাণ করে যে ওই ঘটনার জন্য মোশারফই দায়ী৷ তারপরেই ভিডিও বার্তায় নিজের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগের জবাব দেন মোশারফ৷ –কলকাতা২৪