পাকিস্তানে প্রথম হিন্দু নারী সিনেটর কৃষ্ণা কুমারী

পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন দলিত হিন্দু নারী সিনেট সদস্য হলেন। শনিবার (৩ মার্চ) পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রার্থী হিসেবে ৩৯ বয়সী কৃষ্ণা কুমারি কোহলি নামে ওই হিন্দু নারী সিন্ধু প্রদেশে সিনেটের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দৈনিক পাকিস্তান।

এক প্রতিক্রিয়ায় কৃষ্ণা কুমারী বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। কারণ সিনেটে পৌঁছানো আমার জন্য অকল্পনীয় বিষয় ছিল।’ তিনি বলেন, নির্যাতিত মানুষের অধিকারের তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করবেন তিনি।

তিনি আরো জানান, বাবা-মা আদর করে তাকে ‘কিশু বাই’ বলে ডাকেন। অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে শৈশব পার করেছেন তিনি। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তাকে উমেরকট জেলার কুনরিতে এক ভূস্বামীর জমিতে জোরপূর্বক শ্রম দিতে হতো। তিন বছর সেখানে জেলখানার মতো থাকতে বাধ্য হয়েছেন তারা। পরে পুলিশ সেখানে অভিযান চালানোর পর মুক্তি পান তারা। উমেরকটের তালহি গ্রামে তিনি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হন। এরপর মিরপুরখাস জেলার তানদো কলাচি এলাকায় পড়াশোনা করেন। অনেক সংকটের মধ্যে বাবা-মা কৃষ্ণা ও তার ভাইয়ের লেখাপড়া চালিয়ে নেন।

কৃষ্ণা তার এই সফলতা মা-বাবাকে উৎসর্গ করে জানান, শিক্ষা গ্রহণে বাবা-মাই তাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন। তাদের কারণেই পরবর্তীতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করতে পেরেছেন।

সিন্ধু প্রদেশের থর এলাকার নানগারপারকার গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণা কুমারী কোহলি ১৯৭৯ সালে এক গরীব কৃষকের ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন।

১৯৯৪ সালে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৬ বছর বয়সী সিন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লাল চাঁদকে বিয়ে করেন কুষ্ণা। বিয়ে করলেও লেখাপড়া ছাড়েননি তিনি। সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে এমএ করেন। এরপর ২০০৫ সালে তিনি সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বীর যোদ্ধা রুপলো কোহলির পরিবারের সদস্য কৃষ্ণার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির থার অঞ্চলের এমপি মহেশ কুমার মালানি। নির্বাচনের আগে ডনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সেই আশাবাদের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। রুপলো কোহলি ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ বাহিনীর ওপর আক্রমণের কারণে নগরপার্কারে গ্রেপ্তার হন এবং ১৮৫৮ সালের ২২ আগস্ট তাকে ফাঁসি দেয়া হয়।

শিশু অবস্থায় যেমন একজন ধনী ভূস্বামীর জমিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে শ্রম দিতে বাধ্য হয়েছিলেন কৃষ্ণা। তেমন আজ সম্পদশালী জমির মালিকদের সঙ্গে এবার এক কাতারে দাঁড়িয়ে সিনেটর হিসেবে শপথ নেবেন তিনি।