পানির চেয়েও বেশি কিছু

আহমেদ শরীফ: পানীয় হিসেবে ডাবের পানি আদর্শ। প্রচণ্ড গরমে অতিরিক্ত ঘাম যখন ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে তখন ডাবের পানি আপনাকে স্বস্তি দিতে পারে। এতে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো এসিড, এনজাইম, ভিটামিন-সি, বি কমপ্লেক্স ভিটামিনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল। এখন বিশ্বজুড়ে রূপচর্চার উপকরণ হিসেবেও ডাবের পানি ব্যবহৃত হচ্ছে। শরীর ও ত্বক সুস্থ-সুন্দর রাখতে এর জুড়ি নেই। চলুন জেনে নেই ডাবের পানির আরো কিছু উপকারের কথা।

শরীরে পানির চাহিদা: ডাবের পানিতে থাকা ইলেকট্রোলাইট আপনার শরীরের পানিস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। গরমে প্রচুর ঘাম হলে ডাবের পানি পান করুন। এতে কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকায় শরীরে শক্তি পাবেন।

উচ্চ রক্তচাপ: ডাবের পানিতে ভিটামিন-সি, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম আছে। পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ২০০৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক জরিপে জানা গেছে হাইপারটেনশন কমাতে ডাবের পানি বেশ কার্যকর।

হার্ট টনিক: কোলেস্টেরল ও ফ্যাট ফ্রি হওয়ায় ডাবের পানি হার্টের জন্যও উপকারী। ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে ও ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও এটি সমান কার্যকর। এই পানিতে থাকা পুষ্টি উপাদান দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ওজন কমানো: যাদের ওজন বেশি, তাদের জন্য ডাবের পানি আদর্শ পানীয়। এতে ক্যালরি কম, ফলে হজমেও সহায়তা করে। এতে থাকা পটাশিয়াম শরীরে লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে। ডাবের পানি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। সপ্তাহে ৪-৫ বার পরিমিত হারে ডাবের পানি পান করুন।

মাথা ব্যথা: বেশিরভাগ মাথা ব্যথা, এমনকি মাইগ্রেন দেখা দেয় শরীরে পানি স্বল্পতার কারণে। মাথা ব্যথা সারাতে ডাবের পানি উপকারী। এর ম্যাগনিশয়াম মাইগ্রেনের ব্যথা কমিয়ে দেয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: ব্লাড সুগার পরিমিত রেখে ও ইনসুলিনের হার বাড়িয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও ডাবের পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ডাবের পানি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এটি মূত্র তৈরি ও প্রবাহ বাড়ায়। ইউরিনের ইনফেকশন দূর করে। কিডনি থেকে পাথরও বের করে দিতে ভূমিকা রাখে।

উজ্জ্বল ত্বক: ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ডাবের পানি গোপন উপাদান হিসেবে কাজ করে। ত্বক নরম, সুন্দর ও সতেজ করে তুলতে পারে ডাবের পানি। একে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারও বলা যায়। যদি আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠে বা চুলকায়, তাহলে ত্বকে ডাবের পানি ব্যবহার করতে পারেন।

বয়স কমাতে: প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও সক্রিয় এনজাইম রয়েছে ডাবের পানিতে। তাই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়লে তা কমাতে ডাবের পানি পান করুন। এতে লরিক এসিড আছে, যা ত্বকে ভাঁজ পড়া রোধ করে। ডাবের পানিতে সাইটোকাইন নামের প্লান্ট হরমোন আছে, যা দেহের কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিয়মিত ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুলে চেহারা স্নিগ্ধ, কোমল হয়ে ওঠে।

চুলের যত্নে: ডাবের পানিতে প্রচুর ভিটামিন-কে, আয়রন থাকে। তাই চুল জন্মাতে ও চুল পড়া বন্ধ করতে ডাবের পানি উপকারী। যদি আপনার মাথার তালু চুলকায় ও শুষ্ক থাকে, তাহলে তালুতে ডাবের পানি ঘষে কিছুক্ষণ পর গোসল করুন। এভাবে ১৫দিন করলে উপকার পাবেন।

সাবধানতা: ডাবের পানিতেও কিছু ক্ষতিকর দিক আছে। যারা সার্জারি করাবেন, তারা অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকে ডাবের পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ তা রক্তচাপে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া যাদের কিডনি সমস্যা আছে, তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডাবের পানি পান করুন।