পাবনায় প্রচন্ড গরমে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ

পাবনায় প্রচন্ড গরম পড়ছে। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। তীব্র দাবদাহের সঙ্গে হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন শিশু ও বৃদ্ধসহ অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
এদিকে হাসপাতালের ১৫ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে ১১০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দা ও করিডোরে অবস্থান করতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে বিকেলে হাসপাতালে দেখা গেছে, পাবনা সদর হাসপাতালে প্রতিদিনই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৪০-৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। শয্যা না থাকায় অধিকাংশ রোগীর জায়গা হয়েছে বারান্দা অথবা করিডোরে।
ধারণক্ষমতার বেশি রোগী আসায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের। রোগীরা ১০ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও তাদের জন্য শয্যা বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ছোট্ট একটি বারান্দায় রোগী ও স্বজনরা গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে মৃদু তাপপ্রবাহ থাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৫টি শয্যা থাকলেও এখানে রোগী ভর্তি রয়েছে ১১০ জন। বেশির ভাগ রোগী হাসপাতালের বারান্দায় বা করিডোরে অবস্থান করছেন। দুই সপ্তাহ ধরে রোগীর চাপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। জরুরী বিভাগেও প্রতিদিন অর্ধশতাধিক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন।
পাবনা সদর হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান, হাসপাতালে প্রতিদিনই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। কিছু মধ্য বয়সী রোগীও আছে। বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১১০জন রোগী ভর্তি আছেন। পাবনা সদর হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ২৫০। কিন্তু এ হাসপাতালে সব রোগের রোগী ভর্তি রয়েছে গড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন।
পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের দুবলিয়া এলাকার ডায়রিয়া রোগী হামিদা খাতুন বলেন, হঠাৎ গত কয়েক দিন ধরে আমার পেটের মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শেও কোনো কাজ না হওয়ায় জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ডায়রিয়া ঠিক হওয়ার কোনো লক্ষণই পাচ্ছি না।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভানুমতি ও খালেকা খাতুন বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। খাবার স্যালাইন ঠিকমতো দেওয়া হলেও অন্যান্য স্যালাইন আমরা পাচ্ছি না। এই ছোট্ট রুমে এত মানুষ! রোগ ভালো হওয়া তো দূরের কথা, আরও বাড়ছে। আমরা মানসম্মত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছি না।
পাবনা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ রহিমা খাতুন বলেন, কয়েক দিন ধরে চলা অতিরিক্ত গরমে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। চিকিৎসক সংকটের জন্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার স্যালাইন থাকলেও কলেরা স্যালাইন নেই।
তিনি বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য যে স্যালাইন সেই কলেরা স্যালাইন ৬ মাস আগ থেকে ফুরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সেটি সরবরাহ করা হয়নি। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের জন্যও নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসক নেই। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স নেই। হাসপাতালে জনসংখ্যার প্রতি বিবেচনা করে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স নিয়োগ দেওয়ার আহবান জানান তিনি।
স্যালাইনের স্বল্পতার কথা স্বীকার করে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. ওমর ফারুক মীরর বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীদের জন্য খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। কলেরা স্যালাইনে কিছুটা স্বল্পতা রয়েছে। খুব দ্রæতই সরবরাহ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপে কোনো ওয়ার্ডেই নির্ধারিত শয্যা অনুযায়ী রোগী ভর্তি বা চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। ১২০ বেডের চিকিৎসক দিয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীদের সুস্থ রাখতে নিয়মিত স্বাস্থ্য ব্যায়াম করানো হচ্ছে। চিকিৎসকরা নিয়মিত রাউন্ড দিচ্ছেন।
পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী আশঙ্কাজনকভাবে বাড়লেও সেখানে বাড়তি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সব ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ডায়রিয়া রোগীদেও জন্য ব্যবহৃত ‘কলেরা স্যালাইন’ খুব দ্রæতই সরবরাহ করা হবে।