পোপকে যা বলেছেন রোহিঙ্গারা

ঢাকা সফররত পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের দুর্ভোগ ও দাবির কথা জানিয়েছে ১৫ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল। শুক্রবার সন্ধ্যায় কাকরাইলের আর্চবিশপ হাউসে পোপের সঙ্গে দেখা করে রোহিঙ্গা ন্যাশনালিটি ও লাইফ সিকিউরিটি দিয়ে মিয়ানমারে তাদের ফেরত নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা। এছাড়া আরও অন্তত আটটি দাবি পোপের কাছে জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। তাদের এ সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। প্রতিনিধি দলের একাধিক সদস্য এই তথ্য জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের সদস্য লালু মাঝী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যা যা হয়েছে, সব বলছি। ওরা আমাদের খুব নির্যাতন করছে, আমাদের ঘর পোড়াইছে, গুলি করেছে। আমাদের সম্পত্তি নিয়ে গেছে, আমাদের মসজিদ-মাদ্রাসা জ্বালাইয়া দিয়েছে, মা-বোনেদের ধর্ষণ করছে। আমাদের খুব কষ্ট দিছে, আমাদের দৌড়ায়া দৌড়ায়া গুলি করছে। আমরা পাহাড়-জঙ্গলের মধ্যে লুকাইয়া বাংলাদেশে পলাইয়া আসছি। পোপকে সব বলেছি।’

নিজেদের ওপর নির্যাতন ও অত্যাচারের বর্ণনার পাশাপাশি পোপ ফ্রান্সিসকে বেশ কিছু দাবি জানিয়েছেন প্রতিনিধি দলে থাকা রোহিঙ্গারা। উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প থেকে ঢাকা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আসা রোহিঙ্গা আবুল সৈয়দ বলেন, ‘আমরা পোপকে সুনির্দিষ্ট দাবি জানিয়েছি। তিনি আমাদের দাবিগুলো মনোযোগ শুনেছেন। তিনি বলেছেন বিশ্ব দরবারে আমাদের দাবিগুলো তিনি জানাবেন।’

কী কী দাবির কথা তারা পোপকে জানিয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের সদস্য আবুল সৈয়দ বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, আমাদের ‘রোহিঙ্গা ন্যাশানালিটি’ দিতে হবে, লাইফ সিকিউরিটি দিতে হবে। আমাদের ধন-দৌলত যা নিয়ে গেছে, এগুলো ফেরত দিতে হবে। ঘরবাড়ি পুড়াইয়া দিছে, এগুলোর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, আমরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে চাই, আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছে। আমাদের ছোট ছোট বাচ্চা ছেলে-মেয়েকে পুড়িয়ে মেরেছে। আমরা এগুলোর বিচার চাই। আমাদের মসজিদ-মাদ্রাসা পোড়ায়া দিছে, এগুলো ফেরত চাই। আমাদের জায়গা-জমি ফেরত দিতে হবে। বাংলাদেশ, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ায় যত রোহিঙ্গা আছে, সবাইকে ফেরত আনতে হবে। বিশ্বের সবার কাছে আমাদের দাবি, এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যেন আমাদের ওপর আর নির্যাতন না হয়।’

এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) উখিয়া থেকে ১৫ জন রোহিঙ্গা পুলিশ সিকিউরিটিতে ঢাকায় আসেন। উদ্দেশ্য ছিল, পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে দেখা করা। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কাকরাইলের আর্চবিশপ হাউসে তারা পোপের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান। এই সময় তাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন পোপের কাছে।-বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে প্রকাশিত।