বজ্রপাত থেকে বাঁচতে ‘কৃষকের ছাউনি’

সারাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত-খামারে কৃষি কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পড়েন কৃষকরা। ঝড়-বৃষ্টিতে নিরাপদ আশ্রয় নিতে না পেরে হরহামেশায় ঘটে দূর্ঘটনা। বিশেষ করে মার্চ-মে মাস পর্যন্ত বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও জুন ও জুলাই মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সাথে বজ্রপাত আঘাত হানে। এতে দূর্গম জায়গায় কাজ করতে গিয়ে প্রতি বছর গড়ে দুই শতাধিক কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তাই কৃষকদের বজ্রপাত ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদের উদ্যোগে দূর্গম ও জনবসতি বিহীন এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে “কৃষকের ছাউনি” নামে আশ্রয়স্থল। এতে ঝড়-বৃষ্টির সময় কৃষকরা সহজেই নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারবেন। আর এ উদ্যােগটি ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে সর্বত্র। প্রাথমিক অবস্থায় তিনটি কৃষকের ছাউনি নির্মাণ করে সুফল পেয়েছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিস।

সূত্র মতে, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্যা সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বজ্রপাতে ৭৯ জনের মারা গেছে। এদের মধ্যে ১১ জন নারী এবং ৬৮ জনই পুরুষ। নারী ও পুরুষের মধ্যে ৩ জন শিশু এবং ৯ জন কিশোর নিহত হয়েছে। এ চার মাসে বজ্রপাতে আহত হয়েছেন ২১ জন। তার মধ্যে ১৫ জন পুরুষ এবং ৬ জন নারী। নারী ও পুরুষের মধ্যে ২ জন কিশোর রয়েছে। এছাড়া গত বছর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ৩০০ জন মানুষ বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেছেন।

আর গত এক বছরে সারাদেশে বজ্রপাতে প্রায় ২৩০ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-মে পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছে আরো অর্ধশত কৃষক। আর এসব মৃত্যুর কারণ হিসেবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদ দূর্গম জায়গায় কাজ করা কৃষকদের তাৎক্ষণিক আশ্রয় না পাওয়াকে চিহ্নিত করেন। এরপর তিনি বাস ও ট্রেন যাত্রীদের বসার জন্য যাত্রী ছাউনি দেখে চিন্তা করেন কৃষকের জন্য এমন একটি নিরাপদ ছাউনি নির্মাণের। ভাবনা বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দ্বারস্থ হন তিনি। পরে আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে চলতি বছরের মার্চ মাসে বজ্রপাত ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ রক্ষায় প্রাথমিক তিনটি “কৃষকের ছাউনি” নির্মাণ করা হয়। এতে ধানের খর ও বাঁশ দিয়ে গোলাকৃতির একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বজ্রপাত রুখতে একটি আর্থিং (লোহার দণ্ড) বসানো হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে কৃষকের তৃষ্ণা মেটাতে নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে সেখানে। এতে তিনটি কৃষকের ছাউনি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৮৫ হাজার টাকা। টেকসই ও মানসম্মত এ ঘরে প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে সহজেই রক্ষা পাচ্ছেন কৃষকরা। ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াও প্রচণ্ড গরমে একটু ছায়ায় গা জিড়িয়ে নিচ্ছেন তারা। প্রাথমিক অবস্থায় এ ছাউনি কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সর্বত্র এমন কৃষকের ছাউনি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদ বলেন, গত বছরে সারাদেশে বজ্রপাতে ২৩৩ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আর চলতি বছরেই প্রায় শতাধিক কৃষক বজ্রপাতের শিকার হয়েছেন। তাই কৃষকদের প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে কৃষকের ছাউনি নির্মাণের চিন্তা করি। আশা করছি আমার এই উদ্যোগ প্রতিটি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হলে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, কৃষি কর্মকর্তার ব্যতিক্রমী এ উদ্যােগটি অসাধারণ। দেশের সব উপজেলায় কৃষকের ছাউনি বাস্তবায়ন করলে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু হ্রাস করা যাবে।