শিগগিরই আরো দুটি বিমান ঘাঁটি হবে : প্রধানমন্ত্রী

বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের পাশাপাশি নতুন দুটি বিমান ঘাঁটি করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর একটি হবে বরিশালে এবং অপরটি সিলেটে।

রবিবার যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমিতে নবীন ক্যাডেটদের রাষ্ট্রীয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন।

বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নয়টি ঘাঁটি ও স্টেশন রয়েছে রয়েছে। এগুলো হলো ঢাকার বিএএফ ঘাঁটি বাশার, বিএএফ ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু, চট্টগ্রামের বিএএফ ঘাঁটি জহুরুল হক, যশোরের বি এ এফ ঘাঁটি মতিউর রহমান, টাঙ্গাইলের বিএএফ ঘাঁটি পাহাড়কাঞ্চনপুর, বিএএফ ঘাঁটি কক্সবাজার এবং বিএএফ স্টেশন মৌলভীবাজার, বিএএফ স্টেশন বগুড়া এবং বিএএফ স্টেশন লালমনিরহাট।

নতুন ঘাঁটি করা ছাড়াও বিমান বাহিনীতে নতুন নতুন যুদ্ধজাহাজ ও আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজনের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র তিনটি বিমান নিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এখন আধুনিক ও শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার করে যাওয়া প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য দীর্ঘমেয়াদী ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছে সরকার। এই গোলের আলোকে বিমান বাহিনীতে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার সংযোগ করা হয়েছে।

শিগগির বিমান বাহিনীতে মাল্টি রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট, উন্নত পরিবহন বিমান, অত্যাধুনিক বেসিক ট্রেনিং হেলিকপ্টার, জেট ট্রেনার এয়ারক্রাফট, সিম্যুলেটর, আন-ম্যানড এরিয়াল ভ্যাহিকেল সিস্টেম, লং অ্যান্ড শর্ট রেঞ্জ এয়ারডিফেন্স রাডার এবং মিডিয়াম রেঞ্জ সারফেস টু এয়ার মিসাইল সংযোজনের ঘোষণাও দেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় বরিশাল ও সিলেটে নতুন দুটি বিমান বাহিনী ঘাঁটি স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী আরও শক্তিশালী হবে বলেও আশা করেন শেখ হাসিনা।

বিমান বাহিনী সদস্যদের দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জাতির যেকোনো প্রয়োজনে ভূমিকা রাখতে সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে দেশ-বিদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলা, উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণে বিমান বাহিনীর অগ্রণী ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর তাৎপর্যপূর্ণ অবসান বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।’

মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং স্বাধীনতার পর পর দেশ ও জাতির কল্যাণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর বিমান বাহিনীকে স্বাধীনতা পদক দেয়ার কথাও তুলে ধরেনর শেখ হাসিনা। আর এজন্য বিমান বাহিনীর সব সদস্যকে ধন্যবাদও জানান তিনি।

এর আগে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী সকালে ঢাকা থেকে যশোরের উদ্দেশে রওয়ানা হন। বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী যশোরের বিএএফ (বাংলাদেশ এয়ারফোর্স) একাডেমিকে পৌঁছেন। এরপর তিনি একটি খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন।

এরপর প্রধানমন্ত্রী চ্যাম্পিয়ন স্কোয়াড্রনকে জাতীয় পতাকা তুলে দেন। এরপর অনুষ্ঠিত হয় প্যারেড। এরপর রাষ্ট্রীয় সালাম জানায় প্যারেড।

অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর দুইজন এবং বিমান বাহিনীর দুইজন নারী পাইলট প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ফ্লাইং ব্যাচ গ্রহণ করেন। এরপর বিভিন্ন ফ্লাইং ব্যাচকে ট্রফি এবং সম্মানসূচক তলোয়ার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে নবীন ক্যাডেটরা সংবিধান ও রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য এবং বিমানবাহিনীর কর্তব্য সততা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালনের শপথ নেয়।

সবশেষে হয় বিমান বাহিনীর উড্ডয়ন মহড়া। বাহিনীর নানা ধরনের যুদ্ধ এবং পরিবহন বিমান তাদের নৈপুণ্য প্রদর্শন করে এ সময়।

যশোরের এই সফরে প্রধানমন্ত্রী ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এছাড়া বিকালে যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। বর্তমান মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এটাই আওয়ামী লীগ সভাপতির যশোরে প্রথম জনসভা।