বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দলগুলোর ভাবনা

আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রার্থীদের মনোনয়নের বৈধ-অবৈধের পক্ষে-বিপক্ষে আপিল শুনানি চলছে নির্বাচন কমিশনে। লক্ষ্যণীয় বিষয় প্রতিবেশী দেশের এবারের নির্বাচনের প্রভাব পড়েছে ভারতেও, যা বিগত কয়েকটা নির্বাচনে দেখা যায়নি।খবর বাংলানিউজের।

প্রতিদিনই ভারতের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচনের কোনো না কোনো খবর। বিশেষত পশ্চিমবাংলার সংবাদমাধ্যমে। তাই কলকাতাবাসীর দৈনন্দিন জীবযাপনে, বাসে-ট্রামে আলাপ-আলোচনার অন্যতম বিষয়ে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন। এ কারণেই খোঁজ নেওয়া, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পশ্চিমবাংলার প্রতিদ্বন্দ্বী চারটি রাজনৈতিক দল কী ভাবছে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন নিয়ে।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) পলিটব্যুরোর সদস্য এবং পশ্চিমবাংলা বামফ্রন্টের সভাপতি বিমান বোস বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তাদের সরকার নির্বাচন করবে। তবে এটা ঠিক আমরা যারা ভারতে বসবাস করি, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক; তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা অত্যন্ত গাঢ়। শুধু পড়শি বলে নয়, আমাদের ভাষাও এক। যদিও আমাদের রাজ্যে সব ধরনের ভাষাভাষী মানুষ আছেন তবুও বাংলাভাষীর সংখ্যা বেশি। তাই ভাষার দিক থেকে বাংলাদেশ ও আমরা এক। এটা পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত পাওনা। তাই আমরা চাইবো বাংলাদেশে এমন সরকার গড়ে উঠুক যে সরকার এই সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে।

তিনি আরো বলেন, মূলত বাংলাদেশে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাদের নির্বাচনে আমাদের নাক গলানোর কোনো প্রশ্ন ওঠে না। বর্তমানে ভারতে মৌলবাদী শক্তির বাড়বাড়ন্ত। ভারতে হিন্দু মৌলবাদী শক্তি যখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখনই মুসলিম মৌলবাদী শক্তিও সংগঠিত হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সেরকম প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। সেই আদর্শ সেখানকার বিশাল অংশের মানুষ মেনে চলে। স্বাভাবিকভাবে আমরা চাইবো বাংলাদেশের তেমন সরকারই গড়ে উঠুক, যে সরকার মৌলবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। ভারতের সঙ্গে যে সুসম্পর্কের ভিত্তি গড়ে উঠেছে তাকে রক্ষা করার জন্য উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে এমন সরকারই আমরা চাইব।
কারণ, আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একেবারে প্রতিবেশী রাজ্য। তাই আমাদের কাছে সে প্রত্যাশাই থাকবে।

পশ্চিমবাংলা প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে বড় মাপের একটি ছবি কারোরই নজন এড়াবে না। ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবের গোল্ডেন হ্যান্ডসেক। সেই কার্যালয়ের, লিফটের দুইতলায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের কক্ষ। প্রবীণ এ রাজনীতিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এবারে নির্বাচনের বাংলাদেশে কি রকম সরকার আপনারা প্রত্যাশা? উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এই শুভবুদ্ধির বোধোদয়ের জন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। তবে আমি আশা করি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সরকার ছিলো তারই পুনঃপ্রতিষ্ঠা হোক।

মধ্য কলকাতায় রাজ্য বিজেপির প্রধান দপ্তর। সেখানে বসে সাবেক রাজ্য বিজেপি সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মনের চাহিদা পূরণ করবে এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব আরো সুদৃঢ় করবে এমন সরকার আমরা চাই। বাংলাদেশে ভবিষ্যতে আরো উন্নয়ন হোক, আশা রাখবো সেরকম চিন্তাভাবনা করে সেখানকার নাগরিকরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।

সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ-ভারত যে নীতি গ্রহণ করেছে, তা আপনি কীভাবে দেখেন? জবাবে রাহুল সিনহা বলেন, বর্তমানে যেকোনো দেশের উন্নতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা সন্ত্রাস। সন্ত্রাসবাদকে মূল থেকে উৎক্ষেপণ করতে ভারত অনেকটা এগিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের হাসিনা সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সেটা অত্যন্ত উপযোগী বলে আমি মনে করি।

রাজ্য বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমরা নিশ্চয়ই চাইবো ভারতবর্ষের বন্ধু যে সরকার তারাই বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসুক। বেশকিছু উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী আছে এবং এমন রাজনৈতিক দল আছে যারা এসব গোষ্ঠীকে মদত দেয়। বাংলাদেশে তারা যেন কোনোভাবে ক্ষমতায় না আসতে পারে সেটাই চাইব। পাশাপাশি বাংলাদেশ যেন উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে পারে এমন সরকার আসুক এটাই আশা রাখি।