বাংলাদেশের সফলতায় লুকিয়ে চীনকে চ্যালেঞ্জের সূত্র

২০ বছর ধরে অর্থনীতিতে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। মাত্র কয়েক দশক আগেও দরিদ্র দেশটি ছিল দুর্ভিক্ষ ও বন্যার দেশ। নিম্ন আয়ের সেই দেশটিই এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের মতো একই পথে এগিয়ে যাচ্ছে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া। বাংলাদেশসহ এসব দেশের লক্ষণীয় প্রবৃদ্ধি বলে দিচ্ছে একবিংশ শতাব্দীকে নতুন আকার দিতে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে নতুন নতুন শক্তির উদয় হচ্ছে।

ফিন্যানশিয়াল টাইমসের নতুন একটি প্রতিবেদনে গত ২০ বছরে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

বিশ্ব হয়তো বাংলাদেশের এই পরিবর্তন খুব কমই লক্ষ্য করেছে। কিন্তু দরিদ্র দেশটি তার অবস্থান থেকে গত দুই দশকে একটু একটু করে উন্নতির শিখরে এগিয়ে গেছে। ২০ বছরে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হয়েছে। পোশাক শিল্পে সস্তা শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে।

পোশাক শিল্পে লাখ লাখ নারী কাজ করছে। এই শিল্পের সুবাদেই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন তাদের সন্তানদের পড়াশুনার পেছনেও অর্থ খরচ করতে পারছে।

স্থানীয় শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিভিন্ন দেশের কারখানাগুলো এখন ব্যাপকভাবে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ও রোবটে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। কিন্তু এই কৌশল নিয়েও সমস্যা রয়েছে। মানুষের মতো নিপুণ হাতে কাজ করতে রোবটের আরো কয়েক দশক লেগে যেতে পারে।

ফলে পোশাকের মতো অনেক সম্ভাবনাময় খাতে রোবটের খুব বেশি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। পোশাক খাতে ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত পণ্যে ডিজাইনসহ অন্যান্য পরিবর্তন আনতে হয়। যা রোবট দিয়ে করাটা খুব একটা উপযোগী নয়। তাই পোশাক শিল্পে আগামী দিনগুলোতেও দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকের ওপরই নির্ভর করতে হবে। আর এখানেই সম্ভাবনা দেখাচ্ছে বাংলাদেশের মতো অনেক দেশ।

বাংলাদেশের এই সাফল্য প্রমাণ করে যে অন্যান্য দেশও চীনের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। পোশাক শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনীতিতে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে চীনের মতো দেশও বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্চ হিসেবে নিতে পারে।

চীনের বিকল্প হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশ ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এ ক্ষেত্রে মূল্য সুবিধার দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চীন যেভাবে উন্নত দেশগুলোকে পেছনে ফেলে প্রযুক্তিগত সাফল্য অর্জন করেছে, সে পথেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের বর্তমান যে সাফল্য তার অনুকরণ করে বিশ্বের অন্যান্য দেশও চীনকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য নিজেদের তৈরি করতে পারে। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই উৎপাদন হয়ে উঠেছে দারিদ্র্য থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। যেহেতু পথটি এখনো খোলা, উন্নয়নের জন্য দেশগুলো নিজেদের এখনও প্রস্তুত করতে পারে।