বাগেরহাটের শরণখোলায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্পতি আত্মসাতের অভিযোগ

বাগেরহাটের শরণখোলায় দশ শরিকের বিপুল পরিমান সম্পত্তি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে সেলিনা বেগম ও তার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য ইউনুচ হাওলাদারের বিরুদ্ধে। উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের ধানসাগর গ্রামের জহুর আলী তালুকদার ও লালবরু বিবির মৃত্যুর পর তাদের রেখে যাওয়া ৫একর ৮৬ শতাংশ সম্পত্তি প্রায় ১৫বছর ধরে আত্মসাৎ করে ভোগদখল করছেন তারা।

ওয়ারিশদের অভিযোগে জানা যায়, শরিকরা তাদের প্রাপ্য জমি ফেরত চাইতে গেলে সেলিনা বেগম, তার স্বামী ইউনুচ হাওলাদারসহ তাদের লোকজন নানারকম ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন।

এর জের ধরে শনিবার (৯ মার্চ) সকালে সেলিনা বেগম, স্বামী ইউনুচ হাওলাদার, তার ছেলে আরমান হাওলাদারসহ কয়েকজন মিলে জমির ওয়ারিশ মিনারা বেগম, আলেয়া বেগম, মনোয়ারা রেগম ও সোনিয়া বেগমকে বেদম মারধর করে।

এতে মিনারা বেগমের বাম হাতের কবজি ভেঙে যায়। তাকে শরণখোলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।

এঘটনায় ওয়ারিশদের পক্ষে শিক্ষানবিশ আইনজীবি আরিফা খাতুন এনি চার জনকে আসামী করে শরণখোলা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এক নম্বর আসামী আরমান হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে রবিবার (১০ মার্চ) সকালে বাগেরহাট আদালতে প্রেরন করেছে পুলিশ।

জমির ওয়ারিশদের মধ্যে মনোয়ারা বেগম (৭৫), আলেয়া বেগম (৫০), সুফিয়া বেগম (৮০), খাদিজা বেগমের (৪৫) জানান, তাদের বাবা জহুর আলী তালুকদার বিপুল সম্পদের মালিক ছিলেন। তার বেশিভাগ সম্পত্তি জীবিত থাকাকালীন এলাকার হাটবাজার, মসজিদ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান করে যান।

১৯৮৬ সালে তার (জহুর আলী) মৃত্যুর পর রেখে যাওয়া বাড়ি ও বিলানসহ মোট ৫একর ৮৬ শতাংশ জমি তার স্ত্রী লালবরু বিবি পরিচালনা করতেন। ২০০৯ সালে স্ত্রী লালবরু বিবির মৃত্যুর পরে তার ১১ সন্তানের মধ্যে সপ্তম সন্তান সেলিনা বেগম ও তার স্বামী ইউনুচ হাওলাদার জমির সমস্ত দলিলপত্র আত্মসাৎ করে নিজেরাই মালিক দাবি করেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর তাদের প্রাপ্য জমি ফেরৎ চাইতে গেলে আত্মসাৎকারী সেলিনা বেগম ও তার স্বামী ইউনুচ নানা টালবাহানা করেন। বলে ওয়ারিশদের কোনো জমি নেই। দলিলও নেই। সমস্ত জমি তাদের। জমির কথা বললেই সেলিনা ও ইউনুচ শরিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও হুমকি দেন। তাদের নেশাখোর ছেলে আরমানকে দিয়ে মারধর করেন।

একপর্যায় সেলিনা বেগম কৌশলে অন্যান্য ওয়ারিশদের কাছ থেকে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে বাগেরহাট নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে সম্পতি তার নামে নিখে নেন। এমনকি সেলিনা বেগম তার নিজ নামে পৃথক খতিয়ান খুলে অধিকাংশ জমি নামজারি করেন। এর মধ্যে থেকে অনেক জমি বিক্রিও করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে বহুবার শালিস-বৈঠক হলেও এর কোনো সমাধান হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে জমি আত্মসাতকারী সেলিনা বেগম ও তার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য ইউনুচ হাওলাদারের জাল জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন সম্পত্তি থেকে বি ত ওয়ারিশরা।

এব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সেলিনা বেগমের স্বামী ইউনুচ হাওলাদার বলেন, তাদের বিরুদ্ধে শরিকী সম্পত্তি দখলের যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এছাড়া তারা কাউকে মারধরও করেননি।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওাসি) এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, মামলার প্রধান আসামী আরমান হাওলাদার একজন নেশাখোর। তাকে গ্রেপ্তার করে চালান করেছি। আসামী পক্ষও থানায় পাল্টা একটি অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে।