বাগেরহাটে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে প্রতিবেশীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার বিধবা মর্জিনা

বাগেরহাটের শরণখোলায় পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে প্রতিবেশীর হাতে নিমর্ম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বিধবা মর্জিনা বেগম (৪০)। ধানের ব্যবসায়ী দুলাল হাওলাদার তার বাড়িতে ফেলে চ্যালা কাঠ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন ওই নারীকে।

নারী নির্যাতনের এই ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের উত্তর সোনাতলা গ্রামে। পরবর্তীতে আহতাবস্থায় বাড়িতে এসে ক্ষোভে-অপমানে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান দুই সন্তানের জননী মর্জিনা বেগম।

মাকে আত্মহত্যা করতে দেখে দুই শিশু কন্যা প্রতিবেশীদের জানালে সাইেয়েদ খান নামে একজন গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে মর্জিনা বেগমকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে শরণখোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিষয়টি টের পেয়ে দুলাল ওই রাতে তার লোকজন পাঠিয়ে জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে মর্জিনাকে বাড়িতে নিয়ে যান।

রাতে বাড়িতে বসে অসুস্থ হয়ে পড়লে রবিবার (১১ ফেব্রæয়ারি) সকালে আবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নির্যাতনের শিকার মর্জিনা বেগম ওই গ্রামের মৃত সেন্টু হাওলাদারের স্ত্রী।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন মর্জিনা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক বছর আগে প্রতিবেশী ধান ব্যবসায়ী দুলাল হাওলাদারকে তিনি এক লাখ টাকা ব্যবসার জন্য দেন। ওই এক লাখ টাকার লাভ হিসেবে বছর শেষে ২৪ মণ ধানের সমপরিমাণ মূল্যের টাকা দেওয়ার কথা।

কিন্তু বছর শেষ হলেও দুলাল তাকে কোনো টাকা পয়সা না দিয়ে ঘুরাতে থাকেন। ঘটনার দিন (শনিবার) বিকেলে মর্জিনা বেগম পাওনা টাকা চাইতে দুলালের বাড়িতে যান। এসময় দুলাল অন্যান্য লোকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ অবস্থায় দুলাল টাকা না দিয়ে উল্টো কাঠের চ্যালা দিয়ে মর্জিনা বেগমকে এলোপাতাড়ি পেটানো শুরু করেন।

লোকজনের মধ্যে পেটানোয় ক্ষোভে-অপমানে বাড়িতে এসে ঘরের দরজা বন্ধ করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মর্জিনা বেগম।

প্রত্যক্ষদর্শী পুতুল বেগম বলেন, দুলালের হাতে মার খেয়ে মর্জিনা বেগম বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায় ঘরের দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এই দৃশ্য তার দুই মেয়ে মারিয়া (৯) ও মার্জিয়া (৩) দেখে আমাকে জানায়। পরে সাইয়েদ খান নামের আরেক প্রতিবেশীকে ডেকে এনে ঘরের দরজা ভেঙে মর্জিনা বেগমকে উদ্ধার করি।

পরে তার ভাসুরের ছেলে পারভেজকে দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয় মজির্নাকে।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আশফাক হোসেন বলেন, মর্জিনা বেগমের গলায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তার যথাযথ চিকিৎসা চলছে।

সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এব্যাপারে স্থানীয়ভাবে বসে মিমাংসার চেষ্টা করা হবে। তাতে সমাধান না হলে পরবর্তীতে আইনতগ ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত দুলাল হাওলাদার বলেন, লোকজনের মধ্যে বসে টাকা চাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মর্জিনাকে কয়েকটি চড়থাপ্পড় দিয়েছি।