বান্দরবানে নওমুসলিম ইমাম হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন-সমাবেশ

পার্বত্য জেলার বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে নও মুসলিম ইমাম মো: ওমর ফারুককে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়ির রামগড় ও মাটিরাঙা মানববন্ধন করে খুনিদের গ্রেফতার ও বিচার দাবী করেছে আলেম ওলামা সহ স্থানীয়রা।

সমাবেশ থেকে ১০দফা দাবির ঘোষণা দিয়ে অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকালে রামগড় বাজারে পুলিশ বক্সের সামনে খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কের পাশে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

কাওমী মাদরাসা ও ওলামা ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা মাওলানা মুফতী মীর হোসেন এর সভাপতিত্বে কাওমী মাদরাসা ও ওলামা ঐক্য পরিষদ এবং ইসলামী আন্দোলন রামগড় শাখার যৌথ আয়োজনে ঘন্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।

মানববন্ধনে উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও সংগঠনের আলেম-মাওলানা সহ কর্মসূচীতে একাত্মতা প্রকাশ করে অংশ নেয় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার জনসাধারণ।

মানববন্ধনে বক্তারা অস্ত্রধারীদের গুলিতে শহীদ হওয়া ইমাম মো: ওমর ফারুকের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং পরিবাররের জন্য দু’হাত তুলে মোনাজাত করে দোয়া করেন।

এসময় তারা বলেন, পার্বত্য এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করতে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন সাধারণ জনগণকে গুম হত্যার পাশাপাশি এখন ইমামদের হত্যা করা শুরু করেছে, আর এভাবে চললে পার্বত্য এলাকায় অশান্তির দাবানল ছডড়িয়ে পড়বে।

এসময় বক্তারা আরো বলেন, ইমাম হত্যাকারীদের যথাযথ শাস্তি দাবি করে পাহাড়ি জনপদে বসবাসরত সকল সন্ত্রাসীদের মুলোৎপাটন, সকল মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও আলেম সমাজের নিরাপত্তা প্রদানসহ ৯দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

এসব দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি নেয়ার হুঁশিয়ার দেয়া হয়।

কাওমী মাদ্রাসা ও ওলামা ঐক্য পরিষদ রামগড় শাখার প্রচার সম্পাদক আবদুল হান্নান মনসুর এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন খাগড়াছড়ি শাখার সভাপতি মাওলানা হাফেজ দেলোয়ার হোসেন, উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আনোয়ার ফারুক, রামগড় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল হাই নিজামী, কাওমী মাদ্রাসা ও ওলামা ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা কারী নুর হোসাইন, সংগঠনটির খাগড়াছড়ি যুগ্ন সম্পাদক শহিদ উল্যাহ, রামগড় উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আবদুল মালেক, পার্বত্য নাগরিক সুরক্ষা অধিকারের রামগড় উপজেলা আহ্বায়ক মো: ইউনুছ প্রমুখ।

এদিকে নওমুসলিম ওমর ফারুক হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে উত্তাল বান্দরবানের রোয়াংছড়ির তুলাছড়ি পাড়া জামে মসজিদের ইমাম নওমুসলিম মো: ওমর ফারুককে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতার পুর্বক দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবীতে উত্তাল হয়ে উঠেছে পাহাড়ি জনপদ। তারই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নওমুসলিম মো: ওমর ফারুক হত্যাকারীদের গ্রেফতারসহ বিচারের আওতায় আনা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বক্তারা বলেন, মো: ওমর ফারুক অন্য ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারনেই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিজের জমিতে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন, মানুষকে ইসলামরের দাওয়াত দিচ্ছেন এটাই কি তার অপরাধ? বুধবার(২৩শে জুন) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মাটিরাঙ্গা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সম্মুখে প্রধান সড়কে মানববন্ধনের আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ইসলামী যুব আন্দোলন।

ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে ইসলামি আন্দোলনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি হাফেজ মাও. দেলোয়ার হোসেন, মাটিরাঙ্গা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাও. ক্বারী হারুনুর রশিদ, খাগড়াছড়ি জেলা কওমী ওলামা পরিষদের সভাপতি মাও. আখতারুজ্জামান ফারুকী, মাটিরাঙ্গা খিদমাতুল উম্মাহর সদস্য মুহিবুল্লাহ্, সাংগঠনিক সম্পাদক জুনাইব হাবিব, ইশা ছাত্র আন্দোলনের নেতা শরিফ উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

তিন পার্বত্য জেলায় মুসলমান হত্যাকারী উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবি জানিয়ে বক্তারা পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প স্থাপন ও চিরুনী অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানান। তারা বলেন, ত্রিপুরা, চাকমা ও মারমা সম্প্রদায়ের কেউ খ্রীস্টান ধর্মে দীক্ষিত হলে অপরাধ না হলে ইসলাম ধর্মের ছায়াতলে আসলে অপরাধ হবে কেন। পাহাড়ের নওমুসলিমসহ মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও দাবি জানান বক্তারা।

বান্দরবানের রোয়াংছড়ির তুলাছড়ি পাড়া জামে মসজিদের ইমাম নওমুসলিম মো: ওমর ফারুকসহ সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন মাটিরাঙ্গা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাও. ক্বারী হারুনুর রশিদ।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন (শুক্রবার) রাতে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের তুলাছড়ি আগাপাড়া এলাকায় এশারের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির ত্রিপুরা সম্প্রদায় থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী মো: ওমর ফারুককে গুলি করে হত্যা করে। আর এই ঘটনায় রোয়াংছড়ি থানায় অজ্ঞাত পরিচয়ে ৫জন’কে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।