ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

মন্ত্রী বলেন, ব্যাংকে ডাকাতি ছোট ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না। কুকি চিনকে কঠোরভাবে দমনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা আলোচনার মধ্যে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কুকি চিনের আস্তানা র‌্যাব ও আর্মি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। পরে আমাদের সীমানা পার হয়ে তারা ভিন্ন কোনো দেশে আশ্রয় নেয়। সেখানেই তারা অবস্থান করছিল। এখন তারা কোথা থেকে এসেছে কীভাবে এসেছে, মাঝেমধ্যে তাদের প্রতিনিধিরা আমাদের সঙ্গে কথা বলে। তারা শান্তি চায় বলেও জানিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আক্রমণ ও ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা আমাদের কাছে নতুন কিছু মনে হচ্ছে। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

‘কেন হঠাৎ করে তারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, তা আমাদের জানা ছিল না। তবে যে উদ্দেশ্যেই তারা এসব করুক না কেন; আমরা তাদের কাউকে ছাড় দেব না। আর এমন কিছু ঘটেনি, যাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হবে। আমরা দেখছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি,’ যোগ করেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আগে সবকিছু জেনে নিচ্ছি, তারপর সব ধরনের ব্যবস্থা নেব। এর পেছনে কারা আছে, কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না? কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা অন্য কোনো পরিকল্পনা আছে কি না; সেগুলো দেখে সে অনুসারে ব্যবস্থা নেব।’

তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখে নাশকতার কোনো তথ্য নেই জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেভাবে তথ্য দিচ্ছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেভাবেই কাজ করছে। আমাদের কাছে এখনও কোনো তথ্য আসেনি। তারপরও আমাদের যে সতর্কতা সেটা নেয়া হচ্ছে।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা হামলার কারণ বের করব। আর যারাই দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এর পেছনে ভূরাজনৈতিক কোনো বিষয় আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। অনেক কিছু হতে পারে। তবে তথ্য না জানিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না

এদিকে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকটি বড় বড় শিল্পকারখানায় আগুন লাগার পেছনে কোনো রহস্য আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বান্দরবানের রুমায় ভল্ট ভেঙে ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা লুট করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় ব্যাংকের ম্যানেজারকে অপহরণ এবং নিরাপত্তায় থাকা ১০ পুলিশ ও ৪ আনসার সদস্যের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

একদিন পরই বুধবার থানচিতে সোনালী এবং কৃষি ব্যাংকের শাখায়ও ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে থানচি বাজারে দুটি চাঁদের গাড়িতে পাহাড়ের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা এসে দুই ভাগে ভাগ হয়ে থানচি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ভেতরে ঢোকে। এ সময় সন্ত্রাসীরা দুই ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি কক্ষে বন্দি করে। এরপর সোনালী ব্যাংক থেকে নগদ ১৫ লাখ টাকা ও কৃষি ব্যাংকে গ্রাহকের আড়াই লাখ টাকা ও বেশকিছু মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।

বিষয়টি নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশের নজরে এলে তারা প্রতিহতে এগিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এছাড়া ঠিক কত টাকা তারা লুট করেছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।

বান্দারবান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী বলেন, দুটি গাড়িতে অস্ত্রধারীরা এসে হামলা চালিয়েছে। তবে এটা ডাকাতির উদ্দেশ্যে হামলা কি না, সেটা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীদের লক্ষ্য করে গুলি করেছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।