বিবিসির দিল্লি-মুম্বাই অফিসে তল্লাশি ৬০ ঘণ্টা পর সমাপ্ত

বিবিসির দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের অফিসে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত প্রায় ৬০ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েছে ভারতের আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা।

গত মাসের শেষে বিবিসির তথ্যচিত্র ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেন সম্প্রচারিত হয়। প্রথমটি দেখানোর পরই সরকার তা নিষিদ্ধ করে। ওই তথ্যচিত্রে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার জন্য তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘নিষ্ক্রিয়তাকে’ দায়ী করা হয়েছে। এর দুই সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই কেন্দ্রীয় সরকারের আয়কর বিভাগ বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশি চালাল।

অভিযানের কারণে দুই অফিসে আটকা পড়েন বিবিসির প্রায় ১০ কর্মী। প্রায় তিন দিন অফিসে অবস্থানশেষে বৃহস্পতিবার রাতে তারা বাড়ি ফেরেন। আটকে পড়াদের মধ্যে একজন ব্রিটিশ সঞ্চালকও ছিলেন। দীর্ঘ এ তল্লাশির বিষয়ে আজ গণমাধ্যমকে জানাবে আয়কর বিভাগ।

এদিকে তল্লাশি শেষে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা চলে গেলে একটি টুইট করে বিবিসি কর্তৃপক্ষ। সেখানে লেখা হয়, ‌‘আয়কর বিভাগের কর্তারা দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের অফিস থেকে বেরিয়ে গেছেন। আমরা তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে যাব। আশা করছি, দ্রুত এর নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।’

টুইটে আরও লেখা হয়েছে, ‘বিবিসি একটি বিশ্বস্ত, স্বাধীন সংবাদমাধ্যম। আমরা আমাদের সহকর্মী এবং সাংবাদিকদের পাশে আছি, যারা ভয় এবং পক্ষপাত ছাড়াই খবর পরিবেশন করেন।’

অন্যদিকে এ তল্লাশির সমালোচনা করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেছেন, ভারত যদি ‘গণতন্ত্রের মা’ হয়, তাহলে নরেন্দ্র মোদি ‘ভণ্ডামির পিতা’। বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, সরকার সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করছে। এমন চলতে থাকলে একদিন দেশে কোনো মিডিয়ার অস্তিত্ব থাকবে না।

পাল্টা সরব হয়েছে সরকারি দল বিজেপিও। দলটির মুখপাত্র বিরোধীদের ‘ভণ্ড, ভারতবিরোধী, ঔপনিবেশিক মানসিকতাসম্পন্ন’ বলে মন্তব্য করেছেন। বিজেপির মতে, ভারত ও প্রধানমন্ত্রী মোদিকে কালিমালিপ্ত করতে তারা ষড়যন্ত্র করছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, তল্লাশির বিষয়ে আগেই কর্মীদের জানিয়ে রেখেছিল বিবিসি কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতি হতে পারে আঁচ করে বুধবার সকালে কর্মীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলে ই-মেল পাঠানো হয়েছিল। যদিও শুরু থেকেই আয়কর বিভাগ এ অভিযানকে ‘রুটিন সমীক্ষা’ বলে দাবি করেছে। মূলত কর ফাঁকি ও ট্রান্সফার প্রাইসিং সংক্রান্ত বিষয় খতিয়ে দেখতেই ওই সমীক্ষা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের আয়কর দপ্তর।