বেরোবিতে বর্জ্য নিষ্কাশনে নেই ব্যবস্থা, রাসায়নিক গ্যাসের গন্ধে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

এইচ. এম নুর আলম, বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ‘ল্যাব প্রধান বিভাগ’ হিসেবে রসায়ন বিভাগের বর্জ্য নিষ্কাশনে প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নেই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা। রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরীক্ষার পর বর্জ্যগুলো সরানোর সু-ব্যবস্থা নেই এখানে। এছাড়াও এগুলো পরীক্ষার সময় গ্যাসের যে ঝাঁঝালো গন্ধ নির্গত হয় তার কারণে বিপাকে পড়েছে অনেক শিক্ষার্থীরা।

রসায়ন বিভাগের পাশে অবস্থিত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে অধ্যয়নরত বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাসায়নিক গ্যাসের গন্ধের কারণে বিপাকে পড়েছে বলে জানিয়েছে তারা। বৃহস্পতিবার লাইব্রেরির জার্নাল রুমে গেলে এ সমস্যার কথা তুলে ধরেন তারা।

তাঁরা জানান, এর কারণে তাদের মনোযোগ নষ্টসহ তীব্র গন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ রকম ঝাঁঝালো গন্ধে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসে, হাঁচি আসে,তীব্র যন্ত্রণা অনুভূত হয়। এতে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন বলেও জানিয়েছেন লাইব্রেরিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। একাডেমিক ভবন ৪ এ প্রতিষ্ঠিত বিভাগটির ল্যাবে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি খোলামেলাভাবে পরীক্ষার কারণে এসব সমস্যা হচ্ছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

গণিত, অর্থনীতি, লোক প্রশাসন, ভূগোলসহ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থী জানান, আমরা লাইব্রেরিতে পত্রিকা পড়তে আসি, বই পড়তে আসি কিন্তু রাসায়নিক দ্রব্যাদির ঝাঁঝালো গ্যাসের গন্ধে সুষ্ঠুভাবে সেটা পারি না। আমাদের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। নাক-মুখ চেপে ধরে বই-পত্রিকা পড়তে হয়। এর জন্য আশু ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।

লাইব্রেরির সেমিনার অ্যাটেন্ডেন্ট আসমা খাতুন জানান, চার বছর ধরেই এ রাসায়নিক দ্রব্যাদির ঝাঁঝালো গন্ধটা আসছে। এর ফলে গন্ধ সহ্য করতে না পেরে ঘনঘন বাইরে যেতে হয় এর থেকে মুক্তি পেতে।

রসায়নের এক শিক্ষার্থী বলেন, এখানে বেশ কিছু ‘অরগানিক’ পদার্থের পরীক্ষা করা হয় যার কিছু ইফেক্ট (খারাপ প্রভাব) রয়েছে। তিনি বলেন, এখানে অরগানিক এবং নন-অরগানিক দ্রব্যাদির পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড, হাইড্রোজেন সালফাইড (পঁচা ডিমের মতো গন্ধ), নাইট্রিক অক্সাউড (লাফিং গ্যাস নামে পরিচিত-যা হাঁচির উদ্রেক করে), ব্রোমিন, ক্লোরোপিকরিন (কাঁদানো গ্যাস নামে পরিচিত) ইত্যাদি।

এ বিষয়ে বিভাগটির প্রধান এইচ. এম. তারিকুল ইসলাম বলেন, বহুদিন থেকেই তো ল্যাবে এ ধরণের রাসায়নিক দ্রব্যাদির টেস্ট (পরীক্ষা) করা হয়, তেমন ইফেক্ট থাকলে সমস্যা হতো কারো। কিন্তু হয়নি। তিনি বলেন, গ্যাসতো আর আটকিয়ে রাখা যায়না। তবে তিনি বলেন, রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরীক্ষা করার পর অপসারিত বর্জ্য নিষ্কাষনের কোনো সুব্যবস্থা নেই এখানে। সাবেক উপাচার্যড. একে এম নূর-উন-নবী’র সময়ে বহুবার ‘সক ওয়েল’ (বর্জ্য ফেলার স্থান) এর কথা বললেও তা হয়নি। ভবনের পেছনে দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্য নিষ্কাশনের গর্ত খুঁড়ে রাখলেও এটি সে অবস্থাতেই রয়েছে। সুতরাং দ্রুত ‘সক ওয়েল’ স্থাপন জরুরী। আরো তিনটি ল্যাবের বেশ কিছু কাজ শেষ না হওয়ায় সেগুলোও খুলে দেওয়া যাচ্ছেনা। এই তিনটি ল্যাব চালু থাকলে ঐ একটি ল্যাবের উপর চাপ কমতো।

রাসায়নিক গ্যাসের ঝাঁঝালো গন্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, আসলে রসায়নভবন আলাদাভাবেই স্থাপন করা উচিৎ। কারণ, এখানে বিভিন্ন ধরণের এক্সপেরিমেন্ট (রাসায়সিক দ্রব্যাদি পরীক্ষা) করা হয়। আর ভবনটির পেছনে লাইব্রেরিটি স্থাপনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেন তিনি।

তবে সাবেক উপাচার্যের সময়ে নিয়োগ পাওয়া রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাকে জানানো হয়নি এবং এ সমস্যার ব্যাপারে কিছু জানি না।’

তবে সেই সময়ের বিভাগটির প্রতিনিধি মো. হারুন-আল-রশীদ বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য ছিলেন বিভাগটির প্রধান। এছাড়াও ঐ সময়ে কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে সমস্যাটির কথা জানানো হয়েছিলো।’

এ বিষয়ে আশু ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে গ্রহণের ব্যাপারে বিকালের দিকে বর্তমান উপাচার্যকে কয়েকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

উল্লেখ্য যে, ল্যাব প্রধান বিভাগ হিসেবে রসায়ন বিভাগটি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু প্রতিষ্টাকাল থেকেই বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই এখানে।