ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক বিএনপি’র

ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথরিন কুকের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সোয়া এক ঘণ্টা বৈঠক করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার।

ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে ছিলেন হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর টিমোথি ডকেট। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় যুক্তরাজ্য। গেল এক সপ্তাহে বাংলাদেশের হামলা-মামলা, মৃত্যু ও সরকারি কর্মকর্তাদের রদবদল নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে তারা (যুক্তরাজ্য) দৃষ্টি রাখছে।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ছয় মাস পরে। কিন্তু ভোট চুরির প্রকল্প অ্যাকটিভলি (সক্রিয়ভাবে) চলছে। এজন্য বাংলাদেশে নিরপেক্ষ সরকার ব্যতিত একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এই ভোট চুরির প্রকল্প ভাঙার একমাত্র পথ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এই আলোচনা এখন সব জয়গায় চলছে। আলোচনায় এগুলো উঠে এসেছে।’

আমীর খসরু বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের প্রেক্ষাপটটা যদি ব্যাখ্যা করি, কত মানুষের মৃত্যু, কতজন আহত-গ্রেফতার, কত মামলা, ডিসি পোস্টিং হচ্ছে, পুলিশ অফিসার পোস্টিং হচ্ছে, টিএনও পোস্টিং হচ্ছে। নির্বাচনে চুরি করার যে প্রকল্প এটা গত এক সপ্তাহ ধরে অব্যাহত আছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বৈঠকে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে’র তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপির প্রতিক্রিয়া কী জানতে চাইলে আমির খসরু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে তাগাদা দেওয়ার অর্থটা কি? কিছুটা লজ্জা-শরম থাকাটা তো দরকার তাই না। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’

সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় যে সরকারের কথা বিএনপি বলছে তাতে ব্রিটিশ সমর্থন আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সমর্থন তো শুধু গ্রেট ব্রিটেন না, সারা বিশ্বের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক দেশগুলো বাংলাদেশে কেন আসছে, কেন বার্তা দিচ্ছে, কেন প্রতিনিধিমূলক, অংশীদারিত্বমূলক, অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছে? তারা কি অন্য কোনো দেশে যাচ্ছে? সাউথ এশিয়াতে তারা কোথাও তো যাচ্ছে না। কেন আসছে? বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয় না এটা কি বলার অপেক্ষা রাখে? তারা যেভাবে কথাগুলো বলছে এটার অর্থই হচ্ছে বাংলাদেশে নির্বাচন হচ্ছে না। বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিতে পারছে না, জনগণ তাদের সংসদ ও সরকার নির্বাচন করতে পারছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক দেশগুলো নির্বাচন নিয়ে কথাগুলো বলছে।’

আমীর খসরু বলেন, ‘আজকে নতুন করে কিছু তো বলার নাই। আমরা একটি কথা বারবার বলছি যে বাংলাদেশের ওপর সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশ যেগুলো আছে, বিশ্বের যত গণতন্ত্রকামী সংগঠন আছে, যারাই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা মানবাধিকারে বিশ্বাস করে, আইনের শাসনে-জীবনের নিরাপত্তায় বিশ্বাস করে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে- সবারই এখানে একটা কনসার্ন আছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা অনির্বাচিত সরকার থাকার কারণে আজকে কিন্তু মানবাধিকার, আইনের শাসন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, জীবনের নিরাপত্তা, চরম দুর্নীতি- এ বিষয়গুলো উঠছে। মূল একটা বিষয় হলো- অনির্বাচিত, অবৈধ, দখলদারত্বের সরকার। সুতরাং এটা পরিবর্তনের একটা মাত্র উপায় হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন।’

আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের যে রকম প্রত্যাশা, তাদেরও (ব্রিটিশ হাইকমিশনার) একই প্রত্যাশা যে বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন- জনগণ তাদের সংসদ সদস্য নির্বাচন করবে, তাদের সরকার নির্বাচন করবে। এ কনসার্ন সবার আছে এবং ব্রিটিশ দূতের তো সব সময় ছিল। আমরা ওয়েস্ট মিনিস্টার ডেমোক্রেসি ফলো করি। সুতরাং তাদের সব সময় (কনসার্ন) ছিল। এই বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে।’

সরকারি দল থেকে বলা হচ্ছে বিদেশিরা নির্দলীয় সরকারের কোনো ধরনের ইন্টারেস্ট ফিল করেনি। কিন্তু বিএনপি বলছে তাদের কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে বাংলাদেশে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আমির খসরু বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হলে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া হবে না- এটা কে না বুঝে বাংলাদেশে।’