ভেলায় ভেসে আসা রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর হামলা

নাফ নদী দিয়ে ভেলায় ভেসে আসা রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা করেছে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এসব অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশে নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।

শুক্রবার সকালে রাখাইনের ধংখালীর বালুচর সীমান্ত দিয়ে ১০টি ভেলা একযোগে রওনা দেয়। নাফ নদী দিয়ে ভেসে এপারে আসার সময় মিয়ানমার সীমান্তে বিজিপি সদস্যরা কয়েকটি ভেলায় থাকা রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালায় এবং বৈঠা কেড়ে নেয়। এপারে আসতেও বাধা দেয়। হামলা ও বাধা ডিঙিয়ে আটটি ভেলা দুপুর ও বিকেলে সাবরাংয়ের নয়াপাড়া পয়েন্ট দিয়ে এবং দুটি ভেলা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহ পরীর দ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে এপারে চলে আসে।

হামলার শিকার ভুক্তভোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব কথা জানান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাবরাং বিওপি কোম্পানি কমান্ডার আতিকুর রহমান এবং শাহ পরীর দ্বীপ কমান্ডার আবদুল জলিল।

ভেলায় ভেসে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে নয়াপাড়া এলাকা দিয়ে আসে ৪৪৪ জন। এদের মধ্যে পুরুষ- ৮৬ জন, নারী ১২১ জন ও শিশু ২৩৭ জন রয়েছে। এ ছাড়া শাহ পরীর দ্বীপ পয়েন্টে দুটি ভেলায় দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা রয়েছে বলে জানা গেছে।

ভেলায় ভেসে আসর সময় মিয়ানমার বিজিপির হামলায় কয়েকজন রোহিঙ্গা আহত হয়েছে।

এদের মধ্যে একটি ভেলায় বিজিপির হামলায় মো. শাকের, তাঁর ছেলে ইলিয়াছ ও মো. ছালেহ আহত হয়েছেন। এঁরা সকলে রাখাইনের বুছিডং খোইয়াংসং এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা জানান, রাখাইনের সীমান্তের ধংখালী বালুচরে ১০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা এখনো এপারে আসার জন্য অপেক্ষায় আছে। প্লাস্টিক জার, বাঁশ সংগ্রহ করে তারাও ভেলা তৈরি করছে।

আট ভেলায় আসা রোহিঙ্গারা হচ্ছে রাখাইনের বুছিডং ও রাছিডং থানার কোয়াইংসং পাড়া, ছিন্দিপ্রাং পাড়া, কুলাপে পাড়া, ওয়ারিঅং, ছাংগুডাইং ও গুদাম পাড়ার বাসিন্দা। এসব রোহিঙ্গারা নিজেদের গ্রাম থেকে পালিয়ে এসে কেউ দুই মাস আবার কেউ ১৫ দিন ধরে বালুচরে অবস্থান করেছে।

ওয়ারিঅং গ্রামের শফিউর রহমান (৪৫) জানান, মংডুর বাজার ও আশপাশের খালি গ্রাম থেকে প্লাস্টিক জার, কাঠ ও বাঁশ সংগ্রহ করে। তাদের ভেলাটি তৈরি করতে চারদিন লেগে যায়। একইভাবে অন্য রোহিঙ্গারাও এপারে আসার জন্য ভেলা তৈরি করছে।

একই ভেলায় করে প্রতিবন্ধী বড় ভাই আবদুল আজিজকে কাঁধে নিয়ে আসেন নুরুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা ও এক ভাই। নুরুল ইসলাম জানান, গ্রাম অবরুদ্ধ থাকার কারণে কাজ ও খাদ্য সংকটের কারণে দুই মাস আগে ওয়ারিঅং গ্রাম থেকে বের হয়েছেন। এতদিন ধংখালী বালুচরে অপেক্ষায় ছিলেন। নৌকা না পেয়ে অবশেষে ঝুঁকি নিয়ে ভেলায় ভেসে এপারে আসতে পেরেছেন।

ছাংগুডাইং গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোছন জানান, এপারে আসার কোনো ইচ্ছাই তাঁর ছিল না। গত দুই মাসের বেশি সময় ধংখালী বালুচরে অপেক্ষায় ছিলেন রাখাইনে শান্তি ফিরে আসবে সে আশায়। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় শেষে ভেলায় আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে আসেন। সহিংসতার শুরুর দিকে এক ছেলে মোহাম্মদ হোছন ও জামাতা নুর মোহাম্মদকে মেরে ফেলে সেনারা।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভেলায় আসা রোহিঙ্গারা নাফ নদীর বেড়িবাঁধে বিজিবির হেফাজতে রয়েছে।

এদিকে, হঠাৎ করে বেড়েছে ভেলায় ভেসে আসা রোহিঙ্গাদের ঢল। গত ৮ নভেম্বর একটি ও ৯ নভেম্বর তিনটি ভেলায় রোহিঙ্গা আসলেও শুক্রবার আটটি ভেলায় ৪৪৪ জন রোহিঙ্গা এপারে আসে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৬১ জন যুবক প্লাস্টিকের জারিকেনে সাঁতরিয়ে এপারে ঢোকে।

অপরদিকে, রাতে সাগরের পশ্চিম পয়েন্ট দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা এপারে ঢুকেছে। এর মধ্যে শামলাপুর পয়েন্ট দিয়ে দুই শতাধিক, মহেশখালিয়াপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে শতাধিক ও শাহ পরীর দ্বীপ দিয়ে প্রায় ৫০ জন রোহিঙ্গা এপারে আসে।

সাবরাং বিওপির কোম্পানি কমান্ডার আতিকুর রহমান জানান, ভেলায় আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের পর থেকে এ পর্যন্ত ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।