ভোটের সময় পর্যবেক্ষণে বিধিনিষেধ কি প্রভাব ফেলবে?

বাংলাদেশে সাধারণত নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে যেসব অনিয়ম হয় সেগুলো প্রাথমিকভাবে গণমাধ্যম কর্মী বা পর্যবেক্ষকদের চোখে পড়ার মাধ্যমেই প্রকাশ হতো।

কিন্তু এবারের সংসদ নির্বাচনের দিন কোনো মন্তব্য করতে পারবেনা পর্যবেক্ষকরা।

“তারা কোন মিডিয়ার সাথে নির্বাচনবিরোধী বিরূপ মন্তব্য বা কথা বলতে পারবেন না, ছবি তুলতে পারবেন না, গোপন কক্ষে যেতে পারবেন না ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেননা” – ঢাকায় পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে আজই দেয়া এক বক্তৃতায় বলেন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

তিনি বলেন, “নির্বাচনে যারা পর্যবেক্ষক হবেন তারা শুধু ভোটকেন্দ্রে কোন অনিয়ম হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করবেন। তিনি তার লিখিত রিপোর্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে জমা দেবেন”।

তিনি বলেন, “লিখিত রিপোর্ট জমা দেয়ার আগে কোনো মন্তব্য করবেন না। আপনারাও যখন কম্পাইল করে জমা দেবেন, তার আগে কোনো মন্তব্য করবেন না”।

পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন কমিশন যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে কিছু ইতিবাচক দিকও আছে।

তিনি বলেন, পর্যবেক্ষণ যারা করবেন – তারা কোনো কর্মকর্তার কাজে বাধা দিতে পারবেনা ও বুথে যেতে পারবেনা। কেন্দ্রে অল্প সময় থেকে চলে আসবে ও কোনো কাজে বাধা দেবেনা।

মুনিরা খান বলছেন, মিডিয়া তো আছে এবং সরকার তো মিডিয়াকে বাধা দিচ্ছেনা। তবে অসম্পূর্ণ কোনো পর্যবেক্ষণ দিলে তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

“পর্যবেক্ষক নিজেরা রিপোর্ট দিতে পারেনা। সবার রিপোর্ট জড়ো করে একটা রিপোর্ট তৈরি করতে হয়। যে কোনো পর্যবেক্ষককে মতামত দেয়ার সুযোগ দিলে তাতে তার সংস্থার রিপোর্ট নিয়ে সমস্যা হতে পারে”।

তিনি বলেন, একজন পর্যবেক্ষক সহিংসতায় সম্পৃক্ত হতে পারবেনা এবং তারা তেমন কিছু হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জানাবেন।

তবে নির্বাচনের আগের পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন মুনিরা খান।

“টাইম টু টাইম রিপোর্ট নিলে নির্বাচনের ত্রুটি দুর করতে কমিশন ভূমিকা রাখতে পারতো”।

নতুন করে কেনো বিধিনিষেধ?

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, আগে তফসিল ঘোষণার তিনদিনের মধ্যে জানাতে হতো কোথায় কে পর্যবেক্ষণ করবে, এখন সেটি দশ দিন করা হয়েছে।

কোনো পর্যবেক্ষক ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পেলে তারা কমিশনকে জানাতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“পর্যবেক্ষণ শেষে রিপোর্ট প্রস্তুত করে তারা গণমাধ্যমকে জানাতে পারেন। একজন ব্যক্তি পর্যবেক্ষক সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে পারেননা। এটা আগেও ছিলো, এখনও আছে। এটা বিশ্বব্যাপী অনুসরণ করা হয়”।

কত পর্যবেক্ষক সংস্থা আছে ?

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে মোট ১১৯টি পর্যবেক্ষক সংস্থার নাম নিবন্ধিত আছে। এবার এর বাইরে বিভিন্ন বিদেশী মিশনের প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষক হিসেবে নির্বাচনের দিন ভোট কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

তবে এবার মোট কত পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবেন তা এখনো জানা যায়নি।

কীভাবে কাজ করে বাংলাদেশের সংস্থাগুলো?

সাধারণত নির্বাচনের দিন পর্যবেক্ষকরা ভোট কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করেন এবং পর তাদের মতামত তাদের সংস্থার কাছে জমা দেন।

সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সব রিপোর্ট জড়ো করে নির্বাচন সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ভাবে মতামত প্রকাশ করা হয়।

এছাড়া স্বতন্ত্রভাবে যারা পর্যবেক্ষণ করেন – তারাও গণমাধ্যমে কিংবা নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের রিপোর্ট জানাতে পারেন।

তবে গত কয়েকটি নির্বাচনের দিন পর্যবেক্ষকদের অনেকে গণমাধ্যমের কাছে নির্বাচন সম্পর্কে তাদের মতামত দিয়েছেন।

-বিবিসি বাংলা