মন্দির সংস্কার-মেরামতে ২৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দের উদ্যোগ

নির্বাচনের আগে সারা দেশে মন্দির সংস্কার ও মেরামতের জন্য পৌনে তিনশ’ কোটি টাকা বরাদ্দের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একশ কোটি টাকা সিড মানি হিসেবে দেয়া হবে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে।

অর্থ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে গেছে। বাকি ১৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে অর্থমন্ত্রী নিজেই আধা সরকারিপত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রীকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে ১০০ কোটি টাকা প্রদান সংক্রান্ত প্রস্তাব সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের ১০০ কোটি টাকার একটি এনডোসমেন্ট ফান্ড দেব। আর বার্ষিক যে অনুদান দেয়া হয়, তা দেব না। মন্দির সংস্কার ও মেরামত সংক্রান্ত নেয়া প্রকল্পগুলো তো সরকারিভাবেই হচ্ছে। পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তারা ওই ফান্ডের ওপর নির্ভর করবে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে ইতঃপূর্বে সিড মানি হিসেবে ২১ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। বাকি ৭৯ কোটি টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে অর্থমন্ত্রীর কাছে। অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বাকি টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

সূত্রমতে, অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো মেরামত ও সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের নামে গচ্ছিত ২১ কোটি টাকা থেকে প্রাপ্য সুদ এবং সরকারের রাজস্ব খাত থেকে নিয়মিত বরাদ্দ দিয়ে ট্রাস্টের কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। অর্থ সংকটের কারণে দেশের বাইরে হিন্দুদের তীর্থভ্রমণ, দুস্থ ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়ন, অন্তঃধর্মীয় সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে ট্রাস্টের মূলধন বাড়লে সরকারের রাজস্বের ওপর চাপ কমবে। পাশাপাশি ট্রাস্টের পরিকল্পিত কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করা যাবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আগে অর্থ বিভাগ ২১ কোটি টাকা সিড মানি হিসেবে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে দিয়েছে। আর কল্যাণ ট্রাস্টকে ১০০ কোটি টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী। এক্ষেত্রে কল্যাণ ট্রাস্টকে এককালীন টাকা না দিয়ে প্রতিবছর বাজেটে বরাদ্দ দেয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছে অর্থ বিভাগ। কিন্তু এ প্রস্তাবকে গ্রহণ করেননি অর্থমন্ত্রী। হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে তিনি ১০০ কোটি টাকা এককালীন দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। ফলে এ অর্থ ছাড়ের প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে উল্লিখিত বরাদ্দের বাইরে সারা দেশের মন্দির সংস্কার ও মেরামতের জন্য ৪৭৭ কোটি টাকার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে আপাতত ১৭৬ কোটি টাকা ছাড় করার জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীকে ডিও লেটার দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নিজেই।

সূত্র জানায়, দেশব্যাপী সংস্কার ও মেরামত কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ৮৩৩টি মন্দির, আশ্রম, মঠ, আখড়া, শ্মশান সংস্কার-মেরামত-উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য ৯১৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামসহ চারটি জেলার বিদ্যমান ১৪৯টির হিন্দু প্রতিষ্ঠান সংস্কার মেরামত ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৯৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

অন্যান্য সংস্কার কর্মসূচির মধ্যে শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির এবং শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী কালীমন্দিরের জন্য ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, হবিগঞ্জ জেলার বিদ্যমান ৪৮টি হিন্দুধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়।

সংস্কার কর্মসূচির বাইরে ধর্মীয় ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইতদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ২৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ২১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী পুণ্যস্নান উৎসবের অবকাঠামো উন্নয়নে ১২১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়।

এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ১৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীকে ডিও লেটার দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আর এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, এ টাকা বরাদ্দের আগে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে একটি পত্র দেয়া হয় অর্থমন্ত্রীকে। এতে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত পাল বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে ধ্বংস হওয়া বহু মন্দির পুনঃস্থাপন সম্ভব হয়নি। অর্থমন্ত্রীর আন্তরিকতায় এ অর্থবছরে তিনটি কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকেশ্বরীসহ দেশের ১৯৯টি মন্দির সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য প্রায় ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট আপামর হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ট্রাস্ট সীমিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। তাই হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম স্বাভাবিক পরিচালনার জন্য ১০০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।