মহামারি-বজ্রপাতসহ বিপদাপদে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব?

‘হে আমাদের রব! আমাদের থেকে আজাব দূর করুন; নিশ্চয়ই আমরা ঈমান আনলাম।’ সম্প্রতি সময়ে মহামারি করোনার পাশাপাশি আরেকটি আতঙ্ক খুব বেশি লক্ষণীয়; তাহলো- অনাকাঙ্ক্ষিত বজ্রপাতের ঘটনা। আগে কখনো এতবেশি বজ্রপাত দেখা যায়নি। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি ছিল না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- এ মহামারি করোনা ও বজ্রপাত আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার ওপর আজাব বা শাস্তি বিশেষ। এ অবস্থায় বান্দার জন্য করণীয় কী? প্রিয় নবির নির্দেশনাই বা কী? এ থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছেই বা কী দোয়া করব?

মহামারি করোনা ও বজ্রপাত মানুষের জন্য এক ভয়ংকর আজাব ও শাস্তি। এ আজাব ও শাস্তি থেকে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি এ দোয়া করা জরুরি। তাহলো-

رَبَّنَا اکۡشِفۡ عَنَّا الۡعَذَابَ اِنَّا مُؤۡمِنُوۡنَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানকশিফ আন্নাল আজাবা ইন্না মুমিনুন।’

অর্থ : ‘হে আমাদের রব! আমাদের থেকে আজাব দূর করুন; নিশ্চয়ই আমরা ঈমান আনলাম।’ (সুরা দুখান : আয়াত ১২)

মুমিন মুসলমানের জন্য এ দোয়াটি খুব বেশি কার্যকরী। কেননা আল্লাহর কাছে আজাব থেকে মুক্তির আবেদনের পরই মুমিন হওয়ার ঘোষণা আছে দোয়াটি। তাই মহামারি-বিপদাপদে আল্লাহর কাছে বিপদাপদে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহর কাছে কেন আশ্রয় চাইতে হবে? তা এসেছে হাদিসের বর্ণনায়-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চায় না; আল্লাহ তার উপর অখুশী হন।’ (তিরমিজি)

মানুষের সমস্যা, অভাব, অস্থিরতার শেষ নেই। এমন কোনো বিষয় নেই; যে বিষয়ে মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বরং মানুষ প্রতিটি মুহূর্তেই মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী। যে কোনো বিষয়ে আল্লাহর কাছে ধরনা দিতে হয়। সে কারণেই প্রয়োজনীয় কোনো জিনিস আল্লাহর কাছে না চাইলে তিনি বান্দার ওপর রাগান্বিত হন। আর আল্লাহর কাছে চাইলেই তিনি যেমন খুশি হন; তেমনি বান্দার প্রয়োজন পূরণ করে দেন।

মহামারি করোনা-বজ্রপাতসহ যাবতীয় বিপদে মহান আল্লাহর আজাব থেকে মুক্তি চাওয়া এবং তার কাছে আত্মসমার্পনে মুমিন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা সবার জন্য জরুরি ও হাদিসের ওপর যথাযথ আমল।

দুনিয়ার যাবতীয় মুসিবত থেকে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার অন্যতম সময় হলো গভীর রাত। রাতে ওজু করে একনিষ্ঠ মনে আল্লাহর কাছে বান্দা যা চায়; তা-ই পায়। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ রাতে জেগে আল্লাহর কাছে দোয়া করে, তিনি তার দোয়া কবুল করে নেন। আর যদি ওই ব্যক্তি ওজু করে এবং নামাজ আদায় করে তবে সে নামাজও কবুল করা হয়।’ (বুখারি, মিশকাত)

এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবি হজরত মুয়াজকে এ মর্মে নসিহত করেছেন-

হে মুয়াজ! তোমার কোনো কিছু প্রয়োজন হলে আল্লাহর কাছে চাও, তোমার যদি সাহায্যের দরকার হয় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর। জেনে রেখো! যদি গোটা জাতিও তোমার কোনো উপকার করার জন্য একত্রিত হয় তবে ততটুকু উপকারই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার তাকদিরে লিখে রেখেছেন। আর গোটা জাতি যদি তোমার কোনো ক্ষতি করার জন্য সমবেত হয়, তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার তাকদিরে লিখে রেখেছেন।’ (তিরমিজি)

আরও যে দোয়াগুলো পড়া জরুরি

সুতরাং বর্তমান সময়ে করোনা-বজ্রপাতসহ যাবতীয় বিপদাপদে মহান আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে; তার কাছে কাকুতি-মিনতি করে হাদিসের এ দোয়াগুলো বেশি বেশি করা জরুরি। তাহলো-

১. اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দুরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।

২. اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)

৩. اَللَّهُمَّ لَا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَ لَا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَ عَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাদাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা বিআজাবিকা, ওয়া আ’ফিনা ক্ববলা জালিকা।’

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমাদের মেরে ফেল না আর তোমার আজাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদের ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে নাও।’ (তিরমিজি)

৪. سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ

উচ্চারণ : ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি।’ (মুসান্নেফে আবি শায়বায়)

৫. সর্বোপরি কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণে এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়েছেন। তাহলো-

اَللهم آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً، وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান্নার।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের দুনিয়ার কল্যাণ দাও এবং পরকালেরও কল্যাণ দাও। আর জাহান্নামের আজাব থেকে আমাদেরকে বাঁচাও।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, রিয়াদুস সালেহিন)

যাবতীয় বিপদাপদে এ হাদিসের ওপর আমল করা সবার জন্য জরুরি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

اسال الله العفو والعافيه والمعافاه ‘তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা সুস্থতা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করে।’ (তিরমিজি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সুনির্দিষ্ট বিপদাপদ ছাড়াও সব সময় এ দুইটি দোয়া সব সময় বেশি বেশি পড়া-

১. رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : ‘রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান্নার।’

‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন আখেরাতের কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে আমাদের রক্ষা করেুন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২০১ )

২. رَبَّنَا اکۡشِفۡ عَنَّا الۡعَذَابَ اِنَّا مُؤۡمِنُوۡنَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানকশিফ আন্নাল আজাবা ইন্না মুমিনুন।’

অর্থ : ‘হে আমাদের রব! আমাদের থেকে আজাব দূর করুন; নিশ্চয়ই আমরা ঈমান আনলাম।’ (সুরা দুখান : আয়াত ১২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহামারি করোনা-বজ্রপাতসহ সব বিপদাপদে তাঁর কাছে একান্ত আবেদন ও কাকুতি-মিনতি করার তাওফিক দান করুন। যাবতীয় বিপদাপদ থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।