মাঝ আকাশে যেভাবে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছিল বিমানটি

পাইলট, কো-পাইলট, ক্রুসহ ১৪৮ যাত্রী নিয়ে ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে রোববার বিকাল সাড়ে ৪টায় উড্ডয়ন করে বাংলাদেশ বিমানের নতুন উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খী বিজি-১৪৭ নম্বর ফ্লাইটটি।

পাইলট মো. শফি ও সহকারী পাইলট মো. জাহাঙ্গীর ফ্লাইটি পরিচালনা করছিলেন। আকাশে উড়ার পরপরই বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন অস্ত্রধারী এক ব্যক্তি। বিমানটিতে থাকা একাধিক ক্রু ও যাত্রীরা এমন তথ্য জানান।

একাধিক ক্রু জানান, উড্ডয়ন করে আকাশে প্রায় ১৫ হাজার ফুট ওপরের দিকে উড়ে যাচ্ছিল। তখন উড়োজাহাজের ভেতরে যাত্রীদের আসনে থাকা এক ব্যক্তি ওঠে ককপিটের দিকে এসে এক ক্রুকে ধাক্কা দেন এবং একটি পিস্তল বের করে বিমানটি ছিনতাই করার হুমকি দেন। ককপিট না খুললে বোমা মেরে বিমান উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন ওই অস্ত্রধারী ব্যক্তি।

এর মধ্যে অন্য কেবিন ক্রুরা ককপিটে থাকা পাইলট ও সহকারী পাইলটকে গোপনে সাংকেতিক বার্তা দেন, উড়োজাহাজে অস্ত্রধারী আছে, উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা হচ্ছে।

এ সংকেতে পাইলট শফি ও সহকারী পাইলট জাহাঙ্গীর বিমানটির ককপিটের দরজা বন্ধ করে দেন এবং সঙ্গে সঙ্গে জরুরি অবতরণের জন্য চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বার্তা পাঠান।

এরপরে বিমানটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করা হয়। এ সময় ওই অস্ত্রধারী এক ক্রু সাগরকে আটকে রাখে। তবে অবতরণের পর কৌশলে বিমানের ডানার পাশের চারটি ইমারজেন্সি গেট দিয়ে যাত্রীরা নেমে পড়েন।

এদিকে জরুরি অবতরণের পরপরই রানওয়েতে বিমানটি ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ।

পরে সব যাত্রীকে নিরাপদে নামিয়ে আনা হলেও একজন ক্রুকে ওই ছিনতাইকারী জিম্মি করে রাখে বলে সূত্রের খবর।

পরে বিমানবন্দরে যায় সোয়াত টিম ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট। ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসও।

ঘটনাস্থল থেকে একাধিক সূত্র জানায়, বিমানের বিজি-১৪৭ নম্বর ফ্লাইটটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা। কিন্তু উড্ডয়নের পরপরই এ ঘটনা ঘটে।

এরপরই দ্রুত ফ্লাইটের সব যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হয়। বিমানটি রানওয়েতে অবস্থান করে এবং সেটি ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

বিমানবন্দরের একাধিক সূত্র জানায়, যাত্রীদের নামিয়ে আনলেও সাগর নামে একজন ক্রু ও ছিনতাইকারী বিমানটির ভেতরে রয়ে যান।

বিমানটি রোববার বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে জরুরি অবতরণ করা হয়। তাৎক্ষণিক সেখানে বিমান ওঠানামা বন্ধ করা হয় বলে জানান বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ।

পরে সেনা স্পেশাল ফোর্স ও নৌ কমোডর এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমানের নেতৃত্বে নৌ কমোডর দলের অভিযানে সন্দেহভাজন ওই ছিনতাইকারীকে আহতাবস্থায় আটক করা হয় এবং আহতাবস্থায় ক্রু সাগরকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া বিমানটির সব যাত্রী-ক্রুরা সুস্থ রয়েছেন। বিমানের কোনো ক্ষতিও হয়নি।

এরপর রাত পৌনে ৯টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বিমানের ভেতরে অভিযান চালানোর সময় ওই ব্যক্তিকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয় কিন্তু সে অস্বীকৃতি জানালে গুলি চালানো হয়। পরে তার মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির নাম মাহাদী। তার বয়স আনুমানিক (২৬)।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিমানে ক্রুসহ ১৪৮ জন যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই নিরাপদে বের হয়ে এসেছেন।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে ১৪৮ জন যাত্রী নিয়ে বিমানটি ছেড়ে যায়। এর মধ্যে ৮৬ জন ছিলেন দুবাইগামী যাত্রী। বাকি ৬১ জন অভ্যন্তরীণ যাত্রী, যাদের চট্টগ্রামে নামার কথা ছিল। আর চট্টগ্রাম থেকে দুবাইগামী বাকি যাত্রীদের ওঠার কথা ছিল। বিমানটির যাত্রী বহনের ক্ষমতা প্রায় ২৫০ জন।