মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ভারতীয় তরুণীকে বিয়ে করল পাকিস্তানি যুবক

প্রতিবেশী দেশে গিয়েছিলেন সেই দেশ ঘুরে দেখবেন বলে। একজন পরিচিত বন্ধুও ছিলেন সেই দেশে। কিন্তু ডাক্তার তরুণী ভাবতেও পারেননি যে, সেই বন্ধুই সুযোগ বুঝে তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তাঁকে জোর করে বিয়ে করে ফেলবে। পাকিস্তানে গিয়ে এমনই বিপদে পড়েছেন ভারতীয় তরুণী উজমা। পাকিস্তানি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিজের বয়ান নথিভুক্ত করানোর সময় তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর পরিচিত পাকিস্তানি যুবক তাহির আলি তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে বিয়ে করেছে। দিল্লির বাসিন্দা উজমা পেশায় ডাক্তার। বছর দুয়েক আগে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন কর্মসূত্রে। সেখানেই তাহিরের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর।

উজমার অভিযোগ, তাহির নিজের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে অন্য পরিচয় দিয়ে উজমার সঙ্গে আলাপ জমায়। তাহির আদপে নাকি স্কুলের গণ্ডিও পেরোয়নি। মালয়েশিয়ায় শ্রমিকের কাজ করত সে। আগে বিয়েও করেছিল একবার। চারটি সন্তানের পিতা সে। উজমার অভিযোগ, এই সমস্ত তথ্যই সে গোপন রেখেছিল উজমার কাছে।

এর পর গত ১ মে তারিখে উজমা পাকিস্তানে পাড়ি দেন। তাঁর বক্তব্য, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান দেশটি ঘুরে দেখা, এবং পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করা। কিন্তু সে দেশে পা রাখার পর ইসলামাবাদের নিকটবর্তী খাইবার পাখতুনওয়ালার বাসিন্দা তাহিরের সঙ্গে উজমার সাক্ষাতের পরিণাম হয় ভয়াবহ। স্থানীয় আদালতে উজমা জানিয়েছেন, ৩ মে তাহির তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে বিয়ে করে। শু‌ধু তা-ই নয়, বিয়ের পরে উজমাকে নাকি শরীরিক নির্যাতনও করে তাহির।

ভীত উজমা দিল্লিতে তাঁর ভাইকে ফোন করেন সাহায্যের জন্য। উজমার ভাই তাঁকে পরামর্শ দেন যে, যে ভাবেই হোক ভারতীয় হাইকমিশনের অফিসে আশ্রয় নিন উজমা। সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে ৫ মে তাহিরকে নিয়ে উজমা পাড়ি দেন ইসলামাবাদে স্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে। তাহিরকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে উজমা চলে যান ভেতরে। তারপর ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের গোটা বিষয়টি খুলে বলেন। তাঁরা উজমাকে দূতাবাসেরই একটি ঘরে লুকিয়ে রাখেন। ও দিকে ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষার পরে তাহির দূতাবাসের কর্মীদের কাছে উজমার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করলে তাঁরা তাহিরকে বলেন, উজমা সেখানে নেই।

উজমার নামে একটি নিরুদ্দেশ ডায়েরি করে তাহির। ৮ মে সোমবার ইসলামাবাদের একটি আদালত সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার নির্দেশ দেয়। সেখানেই নিজের অভিযোগের কথা বিশদে বলেন উজমা। এ-ও জানান যে, ভারতীয় দূতাবাসই তাঁর পক্ষে পাকিস্তানে একমাত্র সুরক্ষিত জায়গা বলে তিনি মনে করছেন।

অন্য দিকে তাহির সমস্ত অভিযোগই, বলা বাহুল্য, অস্বীকার করেছে। তার বক্তব্য, বিগত দুই বছর ধরে সে এবং উজমা প্রণয়সম্পর্কে আবদ্ধ। নিজের সম্পর্কে সমস্ত সত্যি কথাই সে নাকি উজমাকে জানিয়েছিল। এবং তাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্য নিয়েই পাকিস্তানে এসেছিলেন উজমা। জোর করে নয়, স্বেচ্ছায় উজমা তাকে বিয়ে করেছেন। ভারতীয় হাইকমিশন অবশ্য আদালতের সামনে স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছে যে, উজমাকে পাকিস্তানে রাখা হবে না। তাঁকে দিল্লিতে নিজের আত্মীয়দের কাছে ফেরত পাঠানো হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করাও শুরু করে দিয়েছে তারা।