মিন্নি নয়, রিফাত হত্যার নেপথ্যে চেয়ারম্যানের স্ত্রী?

বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে একের পর এক বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। শুরুতে নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নি এই হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থাকলেও পরবর্তীতে তিনিই হয়ে যান আসামি। পরকীয়াই এই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ বলে জানিয়েছিল পুলিশ। তবে এবার বেরিয়ে এসেছে আরেক তথ্য।

স্থানীয় কয়েকটি সূত্র বলছে, রিফাত হত্যার নেপথ্যে থাকতে পারেন বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্ত্রী সামসুন্নাহার খুকি। তিনি রিফাত হত্যার অন্যতম দুই আসামি রিফাত ফরাজি ও রিশান ফরাজির খালা।

গত ২৬ জুন সকালে বরগুনার কলেজ রোডে প্রকাশ্যে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে যারা কুপিয়ে হত্যা করেন তাদের অগ্রভাগে ছিলেন রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী। ওইদিনের ঘটনার প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট ভাই রিশান পেছন দিক থেকে রিফাত শরীফকে জাপটে ধরে ছিলেন। আর বড় ভাই রিফাত ফরাজি দা দিয়ে কোপাচ্ছিলেন। বড় ভাইয়ের সেই দায়ের আঘাতে রিশানের হাতও অনেকটা কেটে গিয়েছিল। রিফাত হত্যার প্রধান আসামি ছিলেন নয়ন। নয়ন-রিফাত দ্বন্দ্বের কারণ হিসেবে রিফাতের স্ত্রী মিন্নির সঙ্গে নয়নের পরকীয়াকে দায়ী করা হচ্ছিলো।

ভাবা হচ্ছিলো, মিন্নির কারণেই রিফাতের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন নয়ন। কিন্তু রিফাতকে কোপানোর সময় ফরাজি ভাইরাই কেন সবচেয়ে বেশি নৃশংস হয়ে উঠেছিলেন সেই প্রশ্ন উঠছেই। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই ঘটনার পেছনে জড়িয়ে আছে আরেক কাহিনী।

রিফাত ফরাজি ও রিশান ফরাজির বাসা শহরের ধানসিড়ি রোডে হলেও তারা থাকতেন শেখ রাসেল স্কয়ার লাগোয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাসায়। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী শামসুন্নাহার খুকী তাদের খালা হন। খুকীর একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলে কয়েক বছর আগে পানিতে ডুবে মারা যায়। তখন থেকেই দুই ভাই রিফাত ও রিশান তাদের খালা চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে মা বলে ডেকে আসছিলেন। তারা দুই ভাই ওই বাসায়ই থাকতেন। এমনকি চেয়ারম্যানের স্ত্রী তার ভাগ্নেদের সব অপকর্মেই প্রশ্রয় দিতেন বলেও জানা যায়।

রিফাতের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। কিন্তু প্রতিবারই তার খালা চেয়ারম্যানের স্ত্রী খুকি প্রভাব খাটিয়ে তাকে জামিনে ছাড়িয়ে আনেন।

দেলোয়ার হোসেনের বাসার সামনেই রয়েছে তার মালিকানাধীন দোকান। সেটি ভাড়া নিয়ে এক ব্যবসায়ী খাবারের হোটেল ‘মাটিয়াল ক্যাফে অ্যান্ড মিনি চায়নিজ’ করেছেন। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার আগে গত ৫ মে মিন্নি তার স্বামীকে নিয়ে ওই ক্যাফেতে গিয়েছিলেন। রিফাত শরীফ তার মোটরসাইকেল চেয়ারম্যানের বাসার একেবারে সামনে সড়কের পাশে রাখার চেষ্টা করেন। তখন সামসুন্নাহার খুকি বাধা দেন। এ নিয়ে খুকির সঙ্গে রিফাতের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। রিফাত তার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। তখন রিফাতকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন খুকি।

ধারণা করা হচ্ছে, এর জের ধরেই রিফাত শরীফের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন রিফাত-রিশান।

মিন্নি তার সংবাদ সম্মেলনেও এ বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বরগুনা সরকারি কলেজ ফটকের সামনে তার স্বামীকে রিশান ফরাজি প্রথম পথ রোধ করেছিলেন। রিশান তখন দাবি করেছিলেন, রিফাত শরীফ তার মাকে (খুকি) অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন। কেন করেছেন সেটা জানতে চান রিশান। ঠিক একই সময় রিফাত ফরাজী বলেন, ‘তুই (রিফাত) আমার চোখের দিকে তাকাইয়া ক, মাকে কেন তুই গালি দিয়েছো।’ তখন রিফাত-রিশানের সঙ্গে থাকা অন্য আসামিরা রিফাতের কাছে অস্ত্র আছে বলে চিৎকার করে এবং ধর ধর বলে তাকে কিলঘুষি মারতে শুরু করে।

রিফাত হত্যার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, তাকে বরগুনা সরকারি কলেজের ফটক থেকে ধরে আনার আগে থেকেই রিফাত ফরাজি কলেজ ফটকে অবস্থান করছিলেন এবং তার সহযোগীদের নানা নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।

পুরো বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি হত্যার সঙ্গে নিজের এবং শামসুন্নাহার খুকির জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। রিফাতের সঙ্গে তার স্ত্রীর কোনো কথাকাটাকাটির ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।