মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল জনগণের রাষ্ট্র পুলিশি রাষ্ট্র নয় : আ স ম রব

আ স ম রব বলেন, অসংখ্য মানুষের আত্মদান এবং সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল জনগণের রাষ্ট্র কায়েমের জন্য, পুলিশি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নয়। বর্তমান সরকার শুধুমাত্র ক্ষমতাকে সংহত করার জন্য রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে না দিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে।

পুলিশি রাষ্ট্র জনবিচ্ছিন্ন সরকারকে সাময়িক নিরাপত্তা দিচ্ছে কিন্তু রাষ্ট্রকে চূড়ান্ত ঝুঁকিতে ফেলেছে। এই নিপীড়নমূলক রাষ্ট্র গঠনের জন্য শ্রমিক-কৃষক রক্ত দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেনি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি রাষ্ট্রকে গণবিরোধী রাষ্ট্রে পরিণত করার সকল দায় এই সরকারকেই নিতে হবে।

শ্রমিক সমাজকে রাষ্ট্রীয় রাজনীতি থেকে দূরে রেখে অগ্রগামী সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে না। তাই শ্রমিক সমাজকেও রাষ্ট্রীয় রাজনীতিতে সাংবিধানিকভাবে অংশীদারিত্ব প্রদান করতে হবে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নিরস্ত্র শ্রমিকের উপর পুলিশ কর্তৃক নির্বিচারে গুলি করে শ্রমিক হত্যার পর সরকার কোন প্রকার দুঃখও প্রকাশ করেনি, এমনকি কোন তদন্ত কমিটি গঠনের প্রয়োজন মনে করেনি। বরং পুলিশ আবার শ্রমিকদেরকে অবৈধ অস্ত্রধারী হিসাবে চিহ্নিত করে হত্যার জন্য শ্রমিকদেরকেই দায়ী করছে। পুলিশি রাষ্ট্র না হলে সরকার এত শ্রমিক নিহত এবং আহত হওয়ার পরে নিশ্চুপ থাকার কথা নয়।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক জোট ‘মহান মে দিবস ‘উপলক্ষে’ ৬৫ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ জেএসডি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব উপরোক্ত বক্তব্য প্রদান করেন। শ্রমিক জোটের সভাপতি মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজবাহউদ্দিন আহমেদ।

প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন ১৯৭১ সালে শ্রমিকরা ছাত্র জনতার সাথে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশেও শ্রমিকদের অধিকার ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না, যা খুবই দুঃখজনক।

আ স ম রব বাঁশখালীতে শ্রমিক হত্যার জন্য ‘বিচার বিভাগীয়’ তদন্ত দাবি করেছেন, হত্যাকাণ্ডে জন্য জড়িতদের বিচারের আওতায় আনাসহ নিহত এবং আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মোশারেফ হোসেন মন্টুর পরিচালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেএসডি সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, জেএসডি নেতা মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, তৌহিদ হোসেন, আমিন উদ্দিন বিএসসি ব্যারিস্টার ফারাহ খান, এম এ আউয়াল ,এবিএম জামাল উদ্দিন, আবুল হোসেন মিঞা, হাবিবুর রহমান মাস্টার, আব্দুস সোবহান, মনসুর আহমেদ চৌধুরী, ছরওয়ার আজম আরজু, আব্দুল মালেক গাজী প্রমূখ। এছাড়া শ্রমিক জোটের বিভিন্ন অঞ্চল শাখার নেতৃবৃন্দ সভায় বক্তব্য রাখেন।

সভাপতির ভাষণে মোশারফ হোসেন বলেন, সভ্যতার কারিগর শ্রমিকদেরকে নির্বিচারে হত্যা করার সরকারি সংস্কৃতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না। সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিবর্তন করে শ্রম কর্ম পেশাজীবী জনগোষ্ঠীর অংশীদারিত্ব ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করার মাধ্যমেই মে দিবসের তাৎপর্য লালন করা সম্ভব।

আলোচনা সভার পূর্বে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক জোট এক র‌্যালীর আয়োজন করে। র‌্যালী পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেএসডি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বেলায়েত হোসেন বেলাল, মহানগর জেএসডি নেতা মোশারফ হোসেন, হাজী আক্তার ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।