মোদির মন্ত্রিসভায় কে এই প্রতাপ সারেঙ্গি?

প্রতাপ চন্দ্র সারঙ্গী। ওড়িশার বালেশ্বরের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য। বিজেডি প্রার্থী রবীন্দ্র কুমার জেনাকে ১২ হাজার ৯৫৬ ভোটে হারিয়েছেন তিনি। এবার লোকসভা নির্বাচনে উড়িষ্যার বালাসোর আসনে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে একেবারেই তৃণমূল থেকে নরেন্দ্র মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় ডাক পাওয়ায় তিনি এখন চমকের নাম। তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পশুপালন দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গি উড়িষ্যার ‘মোদি’ হিসেবে খ্যাত।

বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা দ্বিতীয়বার শপথ গ্রহণ করেছেন নরেন্দ্র মোদি। তার মন্ত্রিসভায় একেবারে তৃণমূল থেকে মন্ত্রিত্বের ডাক পেলেন এই নেতা। এতদিন উড়িষ্যার বাইরে তিনি খুব একটা পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু এখন তিনি ভারতের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিদের অন্যতম একজন।

তার সম্বল ভাঙা সাইকেল, বাস কুঁড়ে-ঘরে, মন্ত্রী হলেন সাধু হতে চাওয়া ‘ওড়িশার মোদি’। সাদামাটা এই মানুষটি নতুন পাঞ্জাবি কিনেছিলেন শপথের জন্যই। অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি হাততালি পেয়েছেন অখ্যাত এই মানুষটি।

শপথ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির সচিব যখন ঘোষণা করলেন, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এবার শপথ নেবেন প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গি। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো হাততালির ঢেউ। অন্য যে কোনো মন্ত্রীর চেয়ে তার সময় বেশি হাত তালি লক্ষ্য করা গেছে। একেবারে সাধারণ গোছের সাদামাটা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা, উস্কোখুস্কো চুলের এক ব্যক্তি ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মঞ্চের দিকে। আর তুমুল হর্ষধ্বনি চলছে দর্শকদের মধ্যে।

তিনি মঞ্চে আসতেই দর্শকরা হাততালিতে তাকে আভিবাদন জানালেন। মাথার চুল উস্কো খুস্কো, হাওয়ায় উড়ছে! অনেকেই অবাক চেয়ে ছিলেন বছর চৌষট্টির মানুষটির দিকে।

তবে, নির্বাচনে জেতার বহু আগেই মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন প্রতাপ। রাজ্যের মানুষ তাকে আদর করে ডাকেন ‘উড়িষ্যার মোদি’ বলে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাকে নিয়ে উন্মাদনা কম নয়। বিরল এক নেতার সাধারণ জীবনযাপনের লাখ লাখ ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে অন্তর্জালে।

বাঁশ দিয়ে তৈরি কুড়ে ঘরে থাকেন তিনি। সাইকেলে চড়ে যাতায়াত করেন। লোকসভা নির্বাচনে অটোতে করে প্রচারণা চালিয়েছেন। লোকসভার সদস্য হওয়ার আগে প্রতাপ সারেঙ্গি উড়িষ্যার নীলগিরি আসন থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন। ২০০৪ ও ২০০৯ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জয় লাভ করেন এই নেতা। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান এ বিজেপি নেতা।

বালেশ্বরের এক খড়ের চালার বাড়িই তার স্থায়ী ঠিকানা। পোশাক-আশাক ও চলাফেরাও সাধারণ। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করলেও বাহন তার একমাত্র সাইকেল। প্রচারও চালিয়েছেন সাইকেলে চড়ে।

১৯৫৫ সালে ওড়িশার নীলগিরির গোপীনাথপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন প্রতাপ। স্থানীয় ফকিরমোহন কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন। তার ইচ্ছা ছিল, সাধু হয়ে দেশ আর মানুষের সেবা করবেন। কিন্তু মাঠের সন্ন্যাসীরা যখন জানলেন, তার বাবা মারা গেছেন, বাড়িতে মা একা, সঙ্গে সঙ্গে ফেরত পাঠিয়ে দেন মায়ের সেবা করার জন্য। মাঠের সাধু না হতে পারলেও, তাদের মতো সাধারণ জীবনযাপনের অভ্যাস কখনও ছাড়েননি প্রতাপ। বিয়েও করেননি। ছেলেবেলা থেকে ঘাঁটাঘাঁটি করতেন আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে। সেসব নিয়ে লেখালিখিও করতেন।

গণশিক্ষা মন্দির যোজনার অধীনে ময়ূরভঞ্জ ও বালেশ্বরের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় দুঃস্থ শিশুদের জন্য অনেক স্কুলও গড়েছেন নিজ চেষ্টায়। মায়ের মৃত্যুর পর পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাই অবিবাহিত প্রতাপের দেখাশোনা করে। গ্রামের মানুষের কাছেও ঘরের লোক তিনি।

২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। ওড়িশার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যুগ্ম সভাপতিও ছিলেন তিনি।

এবারের নির্বাচনে তার জয়ে স্থানীয়রা যেমন খুশি, খুশি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। তার সঙ্গে প্রতাপের বেশ খাতির। মোদি উড়িষ্যায় গেলে সারেঙ্গির সঙ্গে অবশ্যই দেখা করেন।