মোনাকোতে রোনালদোর পাশে থাকবেন না মেসি!

মাঠে যতই দ্বৈরথ থাক, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হলেই এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে যান লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। মাঠের সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে শ্যূট-টাই পরে হাসিমাখা মুখে দাঁড়িয়ে যান পাশাপাশি। পুরস্কার বিতরণ শেষে একজন হাসেন ‘সেরা’র হাসি। মুখ চেপে অন্যজন হাসেন রানারআপের হাসি। গত এক দশক ধরে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে পরিচিত দৃশ্য ছিল এটি। কিন্তু হায়! গত এক দশক ধরে নিয়ম হয়ে যাওয়া এই দৃশ্যটি আজ মোনাকোতে দেখা যাবে না।

আজ বৃহস্পতিবার রাতে ফ্রান্সের মোনাকোতে বসতে যাচ্ছে উয়েফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চ। কিন্তু মোনাকোর সেই আলোকিত মঞ্চে রোনালদোর পাশে মেসি থাকবেন না। মেসির পরিবর্তে মঞ্চে রোনালদোর পাশে থাকবেন তারই সাবেক সতীর্থ লুকা মড্রিচ ও মোহামেদ সালাহ।

মোনাকোর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে মেসি যে থাকছেন না, এই নিয়তি নিশ্চিত হয়ে যায় কদিন আগেই। ২০১৮ সালের বর্ষসেরা ফুটবলের পুরস্কারের জন্য ৩ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেই জায়গা হয়নি মেসির। তাতে আছেন রোনালদো, মড্রিচ আর সালাহ। আজ এই ৩ জনের যেকোনো একজনের হাতেই উঠবে উয়েফার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার।

সমান ৫টি করে ব্যালন ডি’অর জিতলেও উয়েফার বর্ষসেরা পুরস্কার প্রাপ্তির দৌড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী মেসিকে গত বছরই পেছনে ফেলেছেন রোনালদো। মেসি এই পুরস্কারটা হাতে উঠিয়েছেন দুবার। ২০১১ ও ২০১৫ সালে। রোনালদো ৩ বার, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে। মানে এবার জিতলে এই পুরস্কার জয়ের হ্যাটট্রিক গড়ে ফেলবেন জুভেন্টাসের পর্তুগিজ সুপারস্টার। সঙ্গে মেসিকে পেছনে ফেলতে পারবেন আরও এক ধাপ।

পরিস্থিতি যা, তাতে উয়েফার বর্ষসেরার পুরস্কার সংখ্যাটা রোনালদোর ৪-এ উন্নতি করার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, পর্তুগিজ তারকা এরই মধ্যে উয়েফার বর্ষসেরা গোলের পুরস্কারটি হাতিয়ে নিয়েছেন। গত মৌসুমে জুভেন্টাসের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ওভার-হেড কিকে অবিশ্বাস্য যে গোলটি করেছিলেন, সেটিই রোনালদোকে এনে দিয়েছে বর্ষসেরা গোলের পুরস্কার। বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার প্রাপ্তির দৌড়েও এগিয়ে তিনিই।

রোনালদো এবার জুভেন্টাসে যোগ দিয়েছেন বটে। তবে তার আগে গত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদকে টানা তৃতীয় বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা উপহার দিয়েছেন। দলকে শিরোপা জেতানোর পথে ষষ্ঠ বারের মতো হয়েছেন মৌসুমে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ফলে সেরা খেলোয়াড়ের পাশাপাশি মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেরা ফরোয়ার্ডের পুরস্কার প্রাপ্তির দৌড়েও এগিয়ে রোনালদোই। এই দুটো পুরস্কারই আজ উঠতে পারে তার হাতে।

তবে রোনালদোকে হটিয়ে বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটি উঠতে পারে লুকা মড্রিচের হাতেও। কারণ, পুরস্কারের জন্য ক্লাবের পাশাপাশি জাতীয় দলের পারফরম্যান্সকেও মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর এখানেই এগিয়ে মড্রিচ। ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দলের হয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপটি স্বপ্নের মতো কাটিয়েছেন মড্রিচ। দেশকে প্রথম বারের মতো ফাইনালে তোলার পাশাপাশি নিজে জিতেছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। সঙ্গে ক্লাব রিয়ালের হয়েও মৌসুমটি কাটিয়েছেন দুর্দান্ত।

সব মিলে রিয়ালের এই ক্রোয়েশিয়ান মিডফল্ডারের হাতেও প্রথম বারের মতো পুরস্কারটি উঠতে পারে। ৩ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় যেহেতু আছেন, লিভারপুলের মিশরীয় উইঙ্গার মোহামেদ সালাহ’র জয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে সালাহ’র সেরা হওয়ার সম্ভাবনা অন্য দুজনের তুলনায় কিছুটা কমই।

পুরস্কার যার হাতেউ উঠুক, মোনাকোর মঞ্চে মেসির অনুপস্থিতিই চোখে লাগবে বেশি! প্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদোর পাশে মেসিকে না দেখাটা দৃষ্টিকটুই দেখাবে! তবে ফুটবলপ্রেমীদের চেয়ে মোনাকোর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বেশি করে পুড়াবে মেসিকেই। এক দশক ধরে যে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে গেছেন মধ্যমণি হয়ে, সেই অনুষ্ঠান আজ তাকে নিজ বাসায় স্রেফ দর্শক সেজে টেলিভিশনে দেখতে হবে। কে জানে, বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন সুপারস্টার হয়তো, টিভি বন্ধ করে ঘুমিয়েই পড়তে পারেন!