যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিযুক্ত হচ্ছেন ট্রাম্প?

২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট পদে লড়বার জন্যে এটি হচ্ছে তার তৃতীয় দফার চেষ্টা। কিন্তু, সময়টা মোটেই ভালো যাচ্ছে না রিপাবলিকান এই প্রার্থীর জন্য৷ এই মূহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিযুক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি প্রসিকিউটররা (সরকারি আইন কর্মকর্তা) এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, প্রাপ্তবয়স্ক মুভির অভিনেত্রী এবং পরিচালক স্টর্মি ড্যানিয়েলস এর মুখ বন্ধ রাখতে অর্থ প্রদানের জন্য তিনি ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হতে পারেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন চারটি সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, সম্ভাব্য ওই মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ শুনছে এমন গ্র্যান্ড জুরির সামনে আগামী সপ্তাহে ট্রাম্পকে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিস।

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান এ খবর দিয়ে আরো জানাচ্ছেঃ যদিও ট্রাম্প কর্তৃক ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ যে পদ্ধতিতে এগিয়েছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে যে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অভিযুক্ত হওয়া প্রথম প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে কতোটা গুরুতর ঝুঁকিতে রয়েছেন। এটি ট্রাম্পের জন্য নতুন একটি ধাক্কাও বটে বিশেষ করে তিনি যখন ফের হোয়াইট হাউসে ঢোকার চেষ্টা করছেন।
এদিকে, ট্রাম্পের একজন মুখপাত্র তাকে অভিযুক্ত করার জন্য ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির হুমকিকে ‘নিতান্তই পাগলামি’ বলে অভিহিত করে বলেছেন: “গত পাঁচ বছর ধরে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি কার্যালয় হন্যে হয়ে খুঁজছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জীবনের প্রতিটি দিক তদন্ত করছে। তারা প্রতিটি ক্ষেত্রেই খালি হাতে ফিরেছেন।”
উল্লেখ্য, স্টর্মি ড্যানিয়েলস দাবি করেছিলেন ২০০৬ সালে নেভাদায় ট্রাম্প (বিবাহিত ছিলেন) এর সাথে তার যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। ট্রাম্প এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও তার দীর্ঘদিনের ‘ফিক্সার’ মাইকেল কোহেন ড্যানিয়েলসকে নীরব থাকার জন্য ১৩০,০০০ ডলার অর্থ প্রদানের বিনিময়ে সমঝোতা করেন, যা ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার শেষের দিকে পরিশোধ করেছিলেন। কোহেন পরে ওই অর্থ প্রদানের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে দাবি করেন যে, ট্রাম্পের ‘সাথে সমন্বয় এবং তার নির্দেশেই’ তিনি সেটি করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প কর্তৃক ক্লাসিফায়েড ডকুমেন্ট (সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র) রাখা এবং ২০২০ সালের নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টার আইনি বিতর্কের মধ্যে ওই মামলাটিতে ট্রাম্পের ভূমিকা দীর্ঘমেয়াদী তদন্তে গতি হারাচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু, জানুয়ারি মাসে দেখা গেলো যে, ব্র্যাগ মামলাটির সাক্ষ্য-প্রমাণ শোনার জন্য একটি গ্র্যান্ড জুরিকে নির্বাচন করতে আশ্চর্যজনক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

ওদিকে, ট্রাম্পের অন্যান্য আইনি সমস্যাও বাড়তে থাকে। গত বছরের আগস্ট মাসে ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসভবন মার-এ-লাগো থেকে জব্দ করা ক্লাসিফায়েড ডকুমেন্ট এবং ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বদলাতে প্রচেষ্টার বিষয়ে তিনি জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এর বিশেষ কাউন্সেল দ্বারা তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন।

অন্যদিকে, জর্জিয়ায় ফুলটন কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এটা তদন্ত করে দেখছেন যে ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে রাজ্যটিতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন কিনা।

তাছাড়া, নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটটিয়া জেমস, ট্রাম্প এবং ট্রাম্প অরগানাইজেশান এর বিরুদ্ধে মামলা করছেন এই বলে যে তারা ঋণ এবং কর সুবিধা পেতে গল্ফ কোর্স ও আকাশচুম্বী ভবনের মতো সম্পদের মূল্য সম্পর্কে ব্যাংক ও কর কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করেছে।