রংপুরের পীরগঞ্জে প্রার্থীরা প্রচারণায় সরব, ভোটাররা নিরব
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ পীরগঞ্জ আসনে প্রার্থীরা প্রচারণায় বেশ সরব থাকলেও ভোটারদের মাঝে তেমন কোন উত্তাপ নেই। এ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মোট ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মূলতঃ এ আসনে নৌকা, লাঙ্গল ও স্বতন্ত্র প্রতীকের প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী ভোট লড়াইয়ের সম্ভাবনার কথা জানান সাধারণ ভোটাররা।
বিগত ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনে রংপুর-৬ পীরগঞ্জ আসনে বঙ্গবন্ধু কন্যা পীরগঞ্জের পুত্রবধূ শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নূর আলম মিয়া যাদুকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার আসন রেখে প্রধানমন্ত্রী পীরগঞ্জ আসনটি ছেড়ে দেন। পীরগঞ্জ থেকে নৌকা প্রর্তীকে শিরীন শারমিন চৌধুরী উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হন।
আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মনোনীত নৌকা প্রতীকের ড.শিরিন শারমিন চৌধুরী ,জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী নূর আলম মিয়া যাদু ও আওয়ামীলীগ মনোনয়ন বঞ্চিত জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সিরাজুল ইসলাম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় ভোটের সমীকরণ কিছুটা এলো মেলো। এখন পর্যন্ত পোস্টার টানানো, নির্বাচনী সভা, গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারনায় অনেক এগিয়ে আছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ড.শিরিন শারমিন চৌধুরী।
পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত রংপুর-৬ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭’শ ৫৪। নারী ভোটার ১লক্ষ ৬৫ হাজার ৫শত। পুরুষ ভোটার ১লক্ষ ৬৪ হাজার দুইশত ৫৫ জন। হিজরা ৪ জন। এর মধ্যে নতুন ভোটার রয়েছেন ৩৬ হাজার ৭’শ জন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিগত ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মতিউর রহমান চৌধুরীকে ৩’শ ২৫ ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১লক্ষ ৬০ হাজার ৫শ ৯২ ভোটের মধ্যে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে এরশাদ পায় ৩৫ হাজার ২শত ৬০ ভোট। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রর্তীকের প্রার্থী পেয়েছিল ৩৪ হাজার ৯শত ৩৫ ভোট। ১৯৯৬ সালের ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল ও অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামীলীগসহ সব বিরোধী দল শুধু নির্বাচন বর্জন করেই ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিরোধও করে। ফলে রংপুর ৬ আসনের ভোট গ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে ১লক্ষ ৭০ হাজার ছয়শত উননব্বই ভোটের মধ্যে লাঙ্গল প্রর্তীকের প্রার্থী এরশাদ ৬০ হাজার ৬শত ৬৫ ভোট পেয়ে ২৩ হাজার ৪ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীগ মনোনীত একই প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পীরগঞ্জ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ানম্যান নির্বাচন না করে মনোনয়ন প্রদান করেন নুর মোহাম্মদ মন্ডলকে। অন্যদিকে আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ আসনে প্রার্থী হয়ে ১২ হাজার ৭শত ৩৯ ভোটে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
জাতীয় পার্টি ভোট পায় ৯০ হাজার সাতশত ত্রিশ। এরপর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ লক্ষ ৭০ হাজার ৫শত ৪২ ভোট পেয়ে বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রার্থী নুর মোহাম্মাদ মন্ডলকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো পীরগঞ্জ আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামীলীগের জাতীয় সংসদের সদস্য হন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ভোট পায় ৩৮ হাজার ৬শ ৭২টি।
এ নির্বাচনে নুর মোহাম্মদ মন্ডল জাতীয় পার্টি ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে উপনির্বাচনে আবুল কালাম নৌকা প্রর্তীকে নির্বাচিত হন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে রংপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে নূর আলম মিয়া যাদু , আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত জেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম স্বতন্ত্র ট্রাক প্রর্তীক, কাঁচি প্রর্তীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সম্পুর্ন নতুন মুখ তাকিয়া জাহান চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেস নামের রাজনৈতিক দল থেকে মাহবুল আলম ডাব প্রর্তীক, জাকারিয়া হোসেন কল্যাণ পার্টির হাত ঘড়ি প্রর্তীক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি(এনপিপি) থেকে হুমায়ুন ইজাজ লেভিন (আম) প্রর্তীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন