রাশিয়ায় কনসার্টে হামলার ঘটনায় নিহত বেড়ে ৮২

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে একটি কনসার্টে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০০ জন। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে মস্কোর উত্তর প্রান্তে ক্রোকাস সিটি হলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্যে হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, পাঁচজন বন্দুকধারী এই হামলা চালায়। প্রথমে গুলিবর্ষণের পর সেখানে গ্রেনেড বা বোমা নিক্ষেপ করা হয়। তাতে হলটিতে আগুন ধরে যায়।

হামলার সময় হলটিতে পিকনিক নামে একটি ব্যান্ডের পরিবেশনার প্রস্তুতি চলছিল। এই কনসার্টের জন্য ছয় হাজার ২০০ টিকিট বিক্রি হয়েছিল। ওই হলে নয় হাজারের বেশি মানুষের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। হামলার পর হতাহতের উদ্ধারে আসে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়।

হামলার নিন্দা করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’। ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আশপাশের এলাকা খালি করে দেয়া হয়েছে। হামলার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রাশিয়ার তদন্তকারী সংস্থা।

মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেছেন, আজকে শপিং সেন্টার ক্রোকাস সিটিতে এক ভয়ানক ট্র্যাজেডি ঘটেছে। তিনি বলেছেন, ‘আমি নিহতদের প্রিয়জনদের জন্য দুঃখিত।’

রয়টার্স বলছে, রাশিয়া বিমানবন্দর এবং স্টেশনগুলোর পাশাপাশি ২ কোটিরও বেশি লোকের বিশাল শহুরে এলাকা তথা রাজধানী মস্কোজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনও জনসমক্ষে এই হামলা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স হামলার যে ভিডিও প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, হামলাকারীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে এবং হলের মধ্যেই বোমা ছুড়ছে। অডিটোরিয়ামের ছাদে আগুন লেগে চারদিক ধোঁয়ায় ভরে গেছে।

প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত চলা এই হামলা থেকে বাঁচতে অনেকেই মাটিতে শুয়ে পড়েছিলেন। গুলি চালানো বন্ধ হলে লোকজন সেখান থেকে হামাগুড়ি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে।

রাশিয়ার আপৎকালীন মন্ত্রণালয় তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানিয়েছে, হামলার হাত থেকে বাঁচতে হলের বেসমেন্টে প্রায় ১০০ জন আশ্রয় নিয়েছিলেন। হলের ছাদেও আশ্রয় নিয়েছিলেন অনেকে। সকলকেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘সকল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই এই জঘন্য অপরাধের নিন্দা করা উচিত।’ হামলার নিন্দা করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। তবে এই হামলার সঙ্গে ইউক্রেনের কোনো যোগসাজশ নেই বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র আরও বলছে, মস্কোতে একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার তথ্য ছিল তাদের কাছে। বিষয়টি তারা মস্কোকে এ মাসের শুরুর দিকে জানিয়েছিলও।

এদিকে হামলার পরই ক্রেমলিন সরাসরি কাউকে দায়ী না করলেও কোনো কোনো রুশ আইনপ্রণেতা এ হামলার সঙ্গে ইউক্রেন জড়িত বলে অভিযোগ করেন।

সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ টেলিগ্রাম অ্যাপে লিখেছেন যে হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা যদি ইউক্রেনীয় হয়ে থাকে, তাদের সবাইকে খুঁজে বের করতে হবে এবং সন্ত্রাসী হিসাবে তাদের ধ্বংস করে দিতে হবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক হামলার সঙ্গে ইউক্রেনের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।