রোগীদের মাঝে প্রশান্তির ছোঁয়া ছড়িয়ে দেয় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফুলের বাগান

মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০শয্যা বিশিষ্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি। এরপর সরকারের নানান উদ্যোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ধাপে ধাপে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে থাকে। চিকিৎসক ও কর্মচারীদের আন্তরিকতা এবং সেবা প্রদানে চিকিৎসকদের মানবিক আচরণের কারণে এলাকার গন্ডি পেরিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির সুনাম। দ্রুত সময়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি জনবান্ধব হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিরাপাদ স্বাভাবিক নিরাপদ প্রসব এবং জরায়ুর মুখ পরীক্ষার জন্য ভায়া স্কীনিং পরীক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় ভাবে পুরস্কার পেয়েছে। মুজিব কর্ণারের পাশাপাশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাইব্রেরী স্থাপন করে জাতীয় ভাবে বেশ নন্দিত হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

এবছর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফাকা জায়গাসহ আনাচে কানাচে বিভিন্ন জাতের ফুলের গাছ লাগানোর ফলে পাল্টে গেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির দৃশ্য। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীসহ এলাকার মানুষের মন কেড়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির দৃষ্টি নন্দন ফুল বাগান। সেবা নিতে আসা রোগীদের মাঝে চারদিকে ফুলের বাগানের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে দেয় প্রশান্তির ছোয়া।

ফাকা জায়গার পাশাপাশি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বারান্দা জুড়ে টবে সাজানো নানা রকম পাতা বাহারের গাছ। অপর দিকে হাসপাতালের অপরিতক্ত্য কিছু জায়গায় বপন করা হয়েছে নানা রকম শাক সবজির গাছ। সবকিছু মিলে মুগ্ধতার এক অপরূপ দৃশ্য যা সত্যিই মন কাড়ার মতো। জনবান্ধব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি যেন একটি ফুল বাগান তাই রোগী ও তাদের স্বজনদের পাশাপাশি ফুল বাগানে নানান পেশার দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল দেখার মতো।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা হতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন ও বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য নানাবিধ খেলনা দিয়ে সাজানো হয়েছে এই শিশু কর্ণার। রোগী এবং তাদের স্বজনদের সাথে আসা শিশুরা খানিকটা সময় মনের আনন্দে খেলায় মেতে উঠে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা দেবাশীষ রায় জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান বেশ ভালো। সব সময় পরিস্কার করা হয় কক্ষগুলি। এখানে সবচেয়ে ভালো লাগে ফুলের বাগানগুলি। সকালে ঘুম ভেঙ্গে বারান্দায় দাড়িয়ে যখন ফুলের বাগানের দিকে তাকিয়ে থাকি তখন প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। নিজেকে আর অসুস্থ্য মনে হয় না।

উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের মোঃ আবু বক্কর সুমন নামে রোগীর এক স্বজন জানান, আমার প্রতিবেশি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে। তাকে আমি দেখতে এসেছি। এখানে এসে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি শুধু ফুল আর ফুল। নানান রকমের ফুল দিয়ে ঘেরা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি। বাড়ী ফেরার পথে আমি ফুলের বাগানে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিলাম। তবে এখানে সূর্যমুখী ফুলের বাগানটি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার আফরোজ সুলতানা লুনা জানান, ২০২০সালে সারা দেশে ৮টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে স্বাভাবিক নিরাপদ প্রসব করারেনার ক্ষেত্রে পুরস্কার পাই। ২০২২সালে ভায়া স্কীনিং পরীক্ষায় আমাদের ঝুড়িতে জাতীয় ভাবে আরও একটি পুরুস্কার যোগ হয়। সেখানে আমরা সারা দেশে আমরা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করি। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আারও কিছু পুরুস্কার প্রাপ্তি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে গর্বিত করেছে। আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেক আগে থেকে ফুলের বাগান ছিল। তবে এ বছর বাগান বর্ধিত করে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের পুরো ক্যাম্পাস বিস্তৃত করা হয়েছে। এ কারণ হচ্ছে রোগীরা যখন সেবা নিতে আসে তখন তারা প্রথমে দেখে সেবার মান এবং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিবেশ মনোরম কিনা। মানুষ অসুস্থ্য হলে শারিরিক ও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। শুধু পথ্য দিয়ে তাদেরকে সুস্থ্য করা গেলেও মানসিক ভাবে সুস্থ্য রাখতে হলে মনোরম পরিবেশের দরকার আছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ মোহাম্মদ মহসীন বলেন, সুস্থ্য দেহ সুস্থ্য মন। আমরা তো শুধু দেহ সুস্থ্য রাখার চেষ্টা করি। সুস্থ্য দেহের পাশাপাশি একটা সুস্থ্য মন থাকা প্রয়োজন। মানুষকে সুস্থ্য করে তোলার সাথে তাদের মনের সুস্থ্যতাও ধরে রাখার জন্য এ বাগান তৈরীর মুল উদ্যেশ্য। একজন রোগী যদি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারপাশে বাগান আর ফুলের ছড়াছড়ি দেখে তাহলে স্বাভাবিক ভাবে রোগীটির মনের মধ্যে ভিন্ন অনুভূতি জন্মাবে। এতে করে রোগী দ্রুত সুস্থ্যতা লাভ করবে। আমাদের উদ্যোগগুলি ছিল সবার সন্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল।