রোনালদোর ৯ বছরে এই দুরবস্থা কখনো দেখেনি রিয়াল!

এই তো গত মাসের শুরুর দিকের কথা। রিয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক সার্জিও রামোস প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে বন্ধু ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে অবজ্ঞা করে কথা বলেন। রামোস বলেন, রোনালদোকে ছাড়া রিয়াল আরও ভালো দল! মানে রোনালদো চলে যাওয়ায় রিয়ালের ভালো হয়েছে! কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই নিজের সেই কথাগুলো হয়তো এখন রামোসকেই উল্টো অবজ্ঞা করে বলছে, ‘তুমি ভুল! তুমি ভুল!’ রামোস একা শুধু নন, রিয়াল শিবিরের প্রত্যেকেই রোনালদো শূন্যতা টের পাচ্ছেন ভালো করে।

রোনালদোর ৯ বছরে যে করুণ দৃশ্য কখনো দেখতে হয়নি, রিয়াল যে এখন সেই দুরবস্থার মুখোমুখি। হ্যাঁ, সত্যিই তাই। রোনালদোবিহীন রিয়াল মৌসুমের শুরুটা করেছিল দুর্দান্ত। লিগে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচেই জয়ের পর রিয়াল জিতেছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও। দলের সেই সুসময় দেখেই রামোস গত ৯ বছরের অর্জন ভুলে বন্ধু রোনালদোকে অবজ্ঞা করেন। কিন্তু সেই সুসময় দ্রুতই পেরিয়ে রিয়াল এখন দুরবস্থার মুখোমুখি।

লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মিলিয়ে টানা তিন ম্যাচে গোল করতে ব্যর্থ রিয়াল! পরিসংখ্যান বলছে, রোনালদোর ৯ বছরে কখনোই রিয়ালকে টানা তিন ম্যাচ গোলশূন্য থাকতে হয়নি! রোনালদো ৯ যে বছর বার্নাব্যুতে কাটিয়েছেন, তখনো মাঝেমধ্যে দু”সময় হানা দিয়েছে। কিন্তু এমন অবিশ্বাস্য গোলখরার আগুনে রিয়ালকে কখনোই পুড়তে হয়নি।

আর শুধু গোলশূন্য থাকাই নয়, সর্বশেষ এই তিন ম্যাচের দুটিতেই হেরে গেছে রিয়াল। অন্যটিতে গোলশূন্য ড্র করেছে। গত বুধবার লিগে সেভিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হেরে যায় রিয়াল। এরপর শনিবার নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র। ব্যর্থতার সেই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও রাশিয়ান সিএসকেএ মস্কোর কাছে ১-০ গোলে হেরে গেছে রিয়াল।

মানে সর্বশেষ তিন ম্যাচে নিজেরা কোনো গোল করতে পারেনি। উল্টো হজম করেছে ৪টি গোল। দলের এই চরম দুঃসময়ে রামোসের নিশ্চয় বন্ধু রোনালদোকে খুব মনে পড়ছে! করিম বেনজেমা, গ্যারেথ বেল, মার্কো এসেনসিওরা মৌসুমের শুরুটা করেছিলেন দারুণ। এরপরও কোচ জুলিয়েন লোপেতেগুই রোনালদোর শূন্যতা পূরণ করতে কিনে এনেছেন ঘরের ছেলে মারিয়ানোকে। কিন্তু এই ৪ ফরোয়ার্ড মিলেও দলের গোলখরা কাটাতে পারছেন না।

রিয়াল সর্বশেষ টানা তিন ম্যাচে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিল সেই ২০০৬০৭ মৌসুমে। ইতালিয়ান কোচ ফ্যাবিও ক্যাপেলোর দ্বিতীয় মেয়াদের সময়। সেবার ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর হুয়েলভার কাছে (যেটা ছিল ২০০৬ সালে রিয়ালের শেষ ম্যাচ) ৩-০ গোলে হেরে যায় রিয়াল। এরপর নতুন বছর অর্থাৎ ২০০৭ সালে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দেপোর্তিভো লা করুণার কাছে হেরে যায় ২-০ গোলে। এরপর রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে।

ওই ২০০৬-০৭ মৌসুমের পর কখনো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে হারেনি রিয়াল। এবার সাফল্যের সেই ধারাতেও ছেদ পড়ল। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন রিয়াল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শুরুটা অবশ্য করেছে এএস রোমার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয় দিয়ে। কিন্তু মঙ্গলবার মৌসুমের দ্বিতীয় ম্যাচেই হারের স্বাদ পেল সর্বশেষ তিন মৌসুমেই শিরোপা জেতা রিয়াল।

নিজেদের মাঠে ১-০ গোলে জিতে সিএসকেএ মস্কো যেন রিয়ালকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, এবার শিরোপা ধরে রাখাটা খুব কঠিন হবে।