শনিবার থেকে পঞ্চগড়-ঢাকা ট্রেন চলাচল শুরু

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে চালু হচ্ছে পঞ্চগড় থেকে ঢাকা সরাসরি রেল যোগাযোগ। শনিবার থেকে সকালে দ্রুতযান এবং রাতে একতা এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন পঞ্চগড় থেকে সরাসরি ঢাকা নিয়মিত চলাচল করবে। দেশের দীর্ঘতম এই রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলের জন্য যথাযথ জনবলসহ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রস্তুতি শেষ করেছে রেল বিভাগ।

দীর্ঘদিন পর সরাসরি আন্তঃনগর রেল যোগাযোগ চালুর ঘোষণায় স্থানীয়দের মাঝে আনন্দ উল্লাস দেখা গেছে। রেল চলাচল উদ্বোধনে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে রেল বিভাগ ও জেলা প্রশাসন।

শনিবার সকাল এবং রাতে দুই দফায় দুটি ট্রেন উদ্বোধন করা হবে। এ উপলক্ষে সন্ধ্যায় পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। পঞ্চগড় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনও আনন্দ র্যালির আয়োজন করেছে। তবে আন্তঃনগর ট্রেন দুটিতে পঞ্চগড়ের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা নিয়ে মনোকষ্ট রয়েছে অনেকের মধ্যে।

উত্তরের শুরুর জেলা পঞ্চগড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল পঞ্চগড় থেকে সরাসরি ঢাকা আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল। এই দাবিতে পঞ্চগড় নাগরিক কমিটিসহ স্থানীয় একাধিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং স্থানীয় ছাত্র ও যুব সমাজ দীর্ঘদিন ধরে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিল।

২০১৩ সালে পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড় থেকে পাবর্তীপুর পর্যন্ত আধুনিক রেল যোগাযোগের উদ্বোধন করেন। এরপর বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম জোনের আওতায় ২০১৬ সালে উন্নয়ন কাজ শেষ হয়। কিন্তু সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও নতুন কোচের অভাবে পঞ্চগড় রেলস্টেশন থেকে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালু সম্ভব হয়নি।

বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অংশ হিসেবে ৯৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে দিনাজপুর-পার্বতীপুর-ঠাকুরগাও-পঞ্চগড় পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার রেললাইন ডুয়েল গেজে রুপান্তর করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এরপর গত বছরের ১৭ জুন রেলমন্ত্রী মজিবুল হক পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত দুটি শাটল ট্রেন উদ্বোধন করেন।

শাটল ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী আশ্বাস দেন ইন্দোনেশিয়া থেকে নতুন ৫০টি নতুন কোচ আনার প্রক্রিয়া চলছে। নতুন কোচ আসলে পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এরএর পেরিয়ে যায় ১৬ মাস। রেলমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর থেকে এই শাটল ট্রেনেই দিনাজপুর হয়ে রাজধানী ঢাকা যাতায়াত করতেন এ জেলার যাত্রীরা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে রেলপথে পঞ্চগড়ের দূরত্ব ৬৩৯ কিলোমিটার। দেশের দীর্ঘতম এ রেলপথে পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও হয়ে দ্রুতযান ও একতা এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন নিয়মিত যাতায়াত করবে। এতদিন দিনাজপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত দ্রুতযান ও একতা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি চলাচল করতো। আপাতত কোনো সাপ্তাহিক বিরতি থাকবে না। দ্রুতযান এক্সপ্রেস পঞ্চগড় স্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে।

১০ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে ৬৩৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে। দুই ঘণ্টা বিরতির পর এই ট্রেনটি রাত ৮টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে পরের দিন সকাল সাড়ে ৬টায় পঞ্চগড় পৌঁছাবে। আর একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে পঞ্চগড় পৌঁছাবে। রাত ৯টায় পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকা পোঁছাবে।

ঢাকা থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত দ্রুতযান ও একতায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাথের ভাড়া ১ হাজার ৯৪২ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৫৩ টাকা, নন এসি বাথের ভাড়া ১ হাজার ১৪৫ টাকা এবং শোভন চেয়ারের ভাড়া ৫৫০ টাকা।

পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, এই দুই ট্রেনে ১৩টি করে বগি রয়েছে। একতা এক্সপ্রেসে ৮৯৪ এবং দ্রুতযানে মোট ৯৪৪টি আসন রয়েছে। এসব ট্রেনে এক হাজার ২০০ পর্যন্ত যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। তবে পঞ্চগড় জেলার জন্য দুই ট্রেনে মাত্র ৩৫টি করে শোভন চেয়ার, একটি এসি চেয়ার এবং ১টি দুই জনের নন এসি বাথ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় অতি নগন্য। এজন্য নতুন কোচ না দেয়া এবং বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা নিয়ে মনোকষ্ট দেখা দিয়েছে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে।

পঞ্চগড় নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন সরকার বলেন, দীর্ঘদিন পর আমাদের প্রাণের দাবি পূরণ হয়েছে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জেলাবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন। আমরা উদ্বোধনের দিন শহরে আনন্দ র্যালি করবো। তবে ট্রেন দুটিতে পঞ্চগড়ের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা নিয়ে আমাদের মধ্যে মনোকষ্ট রয়ে গেছে।

পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, শনিবার থেকে পঞ্চগড়-ঢাকা সরাসরি একজোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলের জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। তবে পঞ্চগড় রেলস্টেশন আরও ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হবে। এক্ষেত্রে আমাদের আরও কিছুদিন সময় লাগবে। আপাতত দুই ট্রেনে পঞ্চগড়ের জন্য ৩৫টি করে শোভন চেয়ার বরাদ্দ হয়েছে। এখানে এসি চেয়ার, এসি, নন এসি বাথসহ শোভন চেয়ারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এজন্য আসন সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, পঞ্চগড় থেকে ঢাকা ৬৩৯ কিলোমিটার রেলপথ দেশের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ রেলপথ। দীর্ঘদিন পর হলেও এখান থেকে সরাসরি দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলের খবরে জেলার সকল পর্যায়ের মানুষ বেশ আনন্দিত। এটা বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়নেরই একটি অংশ। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে রেল বিভাগ। উদ্বোধনের দিন সকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনন্দ র্যালিসহ পঞ্চগড় রেলস্টেশনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন সংগঠনও আনন্দ র্যালিসহ নানা আনন্দ উৎসবের কর্মসূচি পালন করবে বলে আমরা জেনেছি।