‘সংবিধানসম্মত’ সমঝোতাতেই রাজী হবে ঐক্যফ্রন্ট?

বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাত্র একদিন আগে অর্থাৎ সাতই নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো সংলাপে বসতে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও আওয়ামী লীগ।

এবার সংলাপের উদ্যোগের শুরুতে আওয়ামী লীগের চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী ‘সংবিধানসম্মত’ আলোচনার ওপর জোর দিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন সংবিধান সম্মত বলতে সংসদ বহাল রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের কথাই বোঝানো হয়েছে।

যদিও ড: কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে সাথে নিয়ে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট সংসদ ভেঙ্গে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনচালীণ সরকারের কথা বলেছে।

এখন দ্বিতীয় দফায় আগামী বুধবারের সংলাপের আগে ঐক্যফ্রন্টের একজন নেতা বলছেন সংবিধানের মধ্যে থেকেই কিছু করা যায় কিনা তারা এখন সেটা বিবেচনা করছেন।

শেষ মুহূর্তের এই সংলাপে নির্বাচন-কালীন সরকারের বিষয়টিকে সংলাপে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না।

“আমরা যে সাত দফা দাবি দিয়েছি, সেটার লক্ষ্য হল একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যাতে করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে সংসদ বাতিল, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সামরিক বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েনের প্রশ্ন আছে। এসব বিষয়ে আমাদের কাছে যদি কোন ব্যাখ্যা চাওয়া হয় আমরা সেটা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

তিনি বিবিসি বাংলাকে ববলেন, “তবে মূল ফোকাসটা থাকবে নির্বাচনকালীন সরকারের ওপরে আর সংবিধান সংশোধন করার প্রস্তাব তো আমাদের আছেই। তবে সংবিধান সংশোধন না করেই সংবিধানের মধ্যে থেকে কিছু করা যায় কিনা আমরা সেটা বিবেচনা করছি। আসল কথা হল, আমাদের পক্ষ থেকে কতোটা মানিয়ে নেয়া সম্ভব, সেটাও বিবেচনার বিষয়।”

তবে পুনরায় সংলাপে সরকারের সায় দেয়াকে বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন মাহমুদুর রহমান মান্না।

সরকার যদি গ্রহণযোগ্যতার মানসিকতা নিয়ে সংলাপে অংশ নেন তাহলে এবারের আলোচনা ফলপ্রসূ হতে পারে বলে তিনি আশা করছেন।

তবে এবারের সংলাপ সুনির্দিষ্ট করতে আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এবার একটি ছোট প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা জানান মাহমুদুর রহমান মান্না।

তবে সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট নির্দিষ্ট কোন প্রস্তাবগুলো সামনে রাখবে সে প্রসঙ্গে এখনো আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

এদিকে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে সংবিধানের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে সংলাপে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলির সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চায়না ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির মতো নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হোক।

সে লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেটা নিশ্চিত করার কথাও জানান তিনি।

ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, “নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সে জন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, তারা যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তাদের ওপর যেন সরকার কোন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সংলাপে আমরা এই ধরণের প্রতিশ্রুতি দেয়ার চেষ্টা করবো।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার থাকবে নামমাত্র। নির্বাচনকালীন সময়ে তাদের কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকবে না। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যেসব পশ্চিমা দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। ওইসব দেশ থেকে যদি নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল আসে। আমাদের তাতেও কোন আপত্তি নেই।”

তবে, নির্বাচন কালীন সময় সামরিক বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েনের যে দাবি ঐক্যফ্রন্ট দিয়েছে সেটা সংবিধান অনুযায়ী সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ড. আবদুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, “দুযোর্গকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়, তেমনি নির্বাচনে যদি এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে তাদের স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত করা হবে। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে কোন বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হবেনা। মেজিস্ট্রেট বা সিভিল প্রশাসনের জুডিশিয়ারি যারা, তারাই এই মেজিস্ট্রেরিলার পাওয়ার খাটানোর এখতিয়ার রাখেন।”

তফসিল ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্তের এই সংলাপকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে এমন সময়ে সংবিধান বা আইনে কোন পরিবর্তন আনা প্রায় অসম্ভব মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রাশেদা রওনক খান।

তিনি বলেন, “যারা দাবি দাওয়া উপস্থাপন করবেন। তাদের নিশ্চয়ই মাথায় আছে যে সংবিধান পরিবর্তনের এখন আর সময় নেই। কিন্তু সংবিধান আর আইন সংশোধনের বাইরে য দাবি দাওয়াগুলো আছে সেগুলোতে দর কষাকষির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সেখানে অনেক কিছু মেনে নেয়ারও জায়গা তৈরি হবে।”

এছাড়া নির্বাচন সর্বজনবিধিত করতে আওয়ামী লীগ লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করবে বলে তিনি আশা করেন।

এর আগে পহেলা নভেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

তিনঘণ্টা-ব্যাপী সেই সংলাপ অনুষ্ঠিত হলেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি বলে বিরোধী-পক্ষের থেকে দাবি তোলা হয়।

তবে এবারের সংলাপে দুই পক্ষ যদি ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে বাস্তবসম্মত দাবি উপস্থাপন করে তাহলে একটি সমঝোতায় আসা সম্ভব বলে মনে করেন রাশেদা রওনক খান।

-বিবিসি বাংলা