সংসদ নির্বাচন: সাতক্ষীরা-১ আসনে ভোটের সমীকরণে এগিয়ে নৌকার স্বপন

৭ জানুয়ারী, রবিবার। আশা-আশঙ্কার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহন। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নিশ্চিত হবে কার নামের পাশে যুক্ত হবে ‘এমপি’ পদবী। তবে ‘সাবেক’ হচ্ছেন বর্তমান এমপি এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। বর্তমানের গতানুগতিক হিসেবে এই আসনে নৌকার বিজয় অনেকটা সময়ের অপেক্ষামাত্র, অনেকটা ঘোষনার অপেক্ষামাত্র।
তবে গতানুগতিক হিসেবের বাইরেও সারাদেশে মতো সাতক্ষীরা-১ আসনের ভোটাররাও মেলাতে শুরু করেছেন অনেক কিছুর হিসাব। কাকে ভোট দিলে কী হবে- তা ভাবছেন তারা। বেহাল সড়ক আর এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ শেষ হতে কত বছর লাগবে- এসব নিয়েই আলোচনা এখন সর্বত্র।
এর সাথে আছে আন্দোলনরত দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতসহ সমমনা বিরোধী দলের ভোট বর্জনের হিসাব নিকাশও।

এতসব আলোচনার মধ্যেও তালা ও কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনকে এগিয়ে রাখছেন ভোটাররা।

তবে নৌকা বিজয়ী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকলেও চুপ করে বসে থাকছেন না নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। দুইটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের কাছে জোরেশোরেই নানান প্রত্যাশা দিয়ে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের সমন্বিত জনসভায় নৌকায় ভোট চেয়েছেন প্রার্থী ও আ.লীগ নেতৃবৃন্দ। ছুটেছেন এ মাথা থেকে অন্য মাথায়। বিতরণ করা হয়েছে লিফলেটও।
শুধু তিনিই নয়, অন্য এমপি প্রার্থীরাও ঘাম ঝরিয়েছেন নিজেদের নানান কৌশলে।

বিগত পাঁচ বছরে সাতক্ষীরা-১ আসনে কী কী উন্নয়ন হয়নি, সুপেয় পানির সমস্যা, জলাবদ্ধতাসহ, ব্রিজ, অনুন্নত সড়ক যোগাযোগের কারণে নগরবাসীকে কী পরিমাণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে- এসব প্রাধান্য পেয়েছে প্রার্থীদের প্রচারণায়।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দেয়া তথ্যানুযায়ী, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাতক্ষীরা-১ আসনে এমপি পদে প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত, বাংলাদেশ কংগ্রেসের এ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী তালা উপজেলা আ.লীগ সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আ.লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এসএম মুজিবর রহমান, মুক্তিজোটের প্রার্থী শেখ মো. আলমগীর, স্বতন্ত্র প্রার্থী আ.লীগ নেতা প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ও তৃণমুল বিএনপি’র সুমি ইসলাম। এছাড়া নির্বাচন থেকে সরে দাড়ালেও ব্যালট পেপারে নাম থাকবে সাবেক হতে যাওয়া বর্তমান এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ও সাবেক এমপি আ.লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমানের।

ভোটাররা বলছেন, এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত। গত কয়েকটি নির্বাচনে নৌকায় ভোটপ্রাপ্তির ফলাফল ও জেলাসহ দুই উপজেলায় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মযজ্ঞতা বিশ্লেষণ করেই তারা এমনটা ধারণা করছেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের সমর্থক আরো বেড়েছে বলে তাদের দাবি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এবার দুই উপজেলায় নতুন ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে। নতুন এই ভোটাররা জীবনে প্রথমবার ভোট দেবেন। সেই ভোটের অর্ধেক ভোটও যদি আওয়ামী লীগের প্রার্থী পান তাহলে তাহলে ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের ভোট সকলের থেকে বেশি হবে নিশ্চয়ই।

এদিকে, নির্বাচনের প্রচার প্রচারণার শুরু থেকেই ভোটাররা আওয়ামী লীগের ফিরোজ আহমেদ স্বপনের সব থেকে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিসেবে ভাবছেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত্কে।
তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের পাশাপাশি কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু ও ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় নৌকা বিজয় অনেকটা সুগম বলে মনে করছে ভোটাররা। তবে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাথে রয়েছে স্বতন্ত্র সরদার মুজিব ও শেখ নুরুল ইসলামও।
অনেকে মনে করছেন- নৌকার ভোট অন্য কোন প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের ভোটাররা দিবে না। এদিক থেকেও ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন এগিয়ে।
তবে যদি ক্ষোভ, অভিমান, বিদ্বেষ বা অন্য কোন কারণে কলারোয়ার আ.লীগের একটি অংশ যদি গোপনে ব্যালটে স্বপন ব্যাতিত অন্য প্রার্থীকে বেছে নেন তবে সেই হিসাবও আলাদা।
এছাড়াও এই আসনে বিএনপি ও জামায়াতের ভোটাররা অনেকটা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করায় বা তারা ভোট দিতে অনাগ্রহ দেখানোয় হিসাবও জটিল হয়েছে। আবার সাধারণ ভোটারদের ভোটদানে অনিহা দেখা দিয়েছে। ফলে সার্বিক বিশ্লেষণ আর হিসেবে-নিকেষে বেশ জটিল হলেও নৌকার বিজয় সময় ও ঘোষনার অপেক্ষামাত্র বলে বেশিরভাগ জনমতে উঠে এসেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দলীয় নির্দেশনার কারণে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভোট দিতে যাবেন না। যদি যান তবে তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল বা দোলনা প্রতিকের প্রার্থী যদি বিএনপি বা জামায়াতের ভোট না পান তবে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।

কেরালকাতা ইউনিয়নের একজন ভোটার সোহাগ হোসেন বলেন, বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নৌকা নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তো আওয়ামী লীগের প্রার্থীই মনোনয়ন পেয়েছে, সুতরাং ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন অনেক ভোট বেশি পেয়ে এমপি নির্বাচিত হবেন।

উপজেলা যুবলীগের সহ.সভাপতি শেখ মাছুমুজ্জামান মাছুম বলেন, আগামি প্রজন্মের জন্য সাতক্ষীরা-১ আসন হবে স্মার্ট উপজেলা। এজন্য নতুন প্রজন্মের ভোটাররা উন্মুখ হয়ে আছে নৌকায় ভোট দেয়ার লক্ষ্যে।

এদিকে, ভোটের হিসাব-নিকাশে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও গত দশ বছরে তালা কলারোয়া বাসির মানুষের ভোগান্তির কথা তুলে ধরতে একেবারেই কুণ্ঠাবোধ করছেন না জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী সৈয়দ দিদার বখত। একইভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ নুরুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মুজিবুর রহমানও দুই উপজেলায় উন্নয়নে বিগত সময়ের ব্যর্থতাগুলো তুলে ধরে তা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন। তাদের পাল্লাও একেবারে বাদ দেয়া যাবে না।

সবকিছুর পরিসংখ্যান শেষ হবে ৭ জানুয়ারী রবিবার সন্ধ্যায়। কার নামের পাশে এমপি যুক্ত হচ্ছে সেটা দেখার অপেক্ষায় সাতক্ষীরা-১ আসনের জনগণ।