সমাবেশস্থলে ৭৬ কেজি বোমা : কী ঘটেছিল সেদিন?

কখনো নিজ বাসভবনে, কখনো জনসভায় আবার কখনো গাড়ির বহরে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুটি ঘটনা ছিল একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তার সমাবেশস্থলে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা।

৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখার মামলায় রোববার ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার ২ নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মমতাজ বেগম এ রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন- ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক, রাশেদ, মো. ইউসুফ, শেখ ফরিদ, জাহাঙ্গীর, আবু বকর, ইয়াহিয়া, শফিকুর রহমান, আব্দুল হাই ও আব্দুল রব।

রায়ে আদালত বলেছেন, ‘হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে এদের গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে।’

একই মামলায় মেহেদী হাসান নামের এক আসামিকে যাবজ্জীবন এবং আনিসুল ইসলাম, মহিবুল্লাহ ও সারোয়ার হোসেন নামে তিন আসামিকে ১৪ বছর করে কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

হত্যাচেষ্টা এবং বিস্ফোরক আইনে করা এ দুই মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ২৫ জন আসামি রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে অন্য মামলায় জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাকে এ মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

বাকিদের মধ্যে ১২ জন কারাগারে এবং ১২ জন পলাতক রয়েছেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

সে দিন যা ঘটেছিল:

২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা সদরের শেখ লুৎফর রহমান কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার আয়োজন করা হয়।

২০ জুলাই সেখানে ভাষণের জন্য মঞ্চ নির্মাণের সময় মাটিতে পুঁতে রাখা হয় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা। পাশেই এক পুকুরে ভেসে ওঠা তারের সূত্র ধরে ওই দিনই বোমাটি উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

২৪ জুলাই হেলিপ্যাডের পাশ থেকে ৮০ কেজি ওজনের আরও একটি দূরনিয়ন্ত্রিত বোমা উদ্ধার করা হয়। বোমা দুটি উদ্ধারের পর কোটালীপাড়া থানায় হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

এরপরই গোপালগঞ্জ শহরের বিসিক শিল্প নগরীতে মুফতি হান্নানের ‘সোনার বাংলা সাবান’ ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। সেখান থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা
হয়। সাবান ফ্যাক্টরির আড়ালে মুফতি হান্নান সেখানে বোমা তৈরি করতেন বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে। এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পরই মুফতি হান্নান পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশ (হুজি) নামে জঙ্গি সংগঠন তৈরি করে মুকসুদপুর উপজেলার বানিয়ারচর গীর্জা, রমনার বটমূলে ও সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপরসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা চালায় মুফতি হান্নান।

এসব কর্মকাণ্ডে অনেকটা রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যায় সে। আফগানযুদ্ধে অংশ নেওয়া এই হুজি নেতা গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালায় বলে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে পুলিশের কাছে।

মামলার আসামিরা

জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর আলোচিত এই মামলা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়। বর্তমানে মামলাটির ২৪ জন আসামির মধ্যে ১২ জন কারাগারে ও ১২ জন পলাতক রয়েছেন।।

বন্দি আসামিরা : মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাহমুদ আজহার, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে রাশেদুজ্জামান ওরফে শিপন, মেহেদী হাসান ওরফে আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে গাজী, ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, আনিসুল ইসলাম আনিস, মাওলানা সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, আবু বক্কর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আরিফ হাসান সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুর রউফ ওরফে মুফতি আব্দুর রউফ ওরফে আ. রাজ্জাক ওরফে আবু ওমর, হাফেজ ইয়াহিয়া।

পলাতক আসামিরা : মুন্সি ইব্রাহিম, মো. শাহনেওয়াজ ওরফে মো.আজিজুল হক, ইউসুফ ওরফে মোহসাব মোড়ল, মো. লোকমান, শেখ মো. এনামুল হক, মিজানুর রহমান, খন্দকার মো. কামাল উদ্দিন সাকের, সারোয়ার হোসেন মিয়া, মুন্সি ইব্রাহিম, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আ. হাই।