সম্মানিত যাকাতের আহকাম মাসায়িল-ফাযায়িল

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য।সাইয়্যিদুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরুদ শরীফ ও সালাম।
সম্মানিত যাকাত শব্দের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ: যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থঃ হচ্ছে বরকত বা বৃদ্ধি। যেহেতু সম্মানিত যাকাত আদায়ের ফলে যাকাত-দাতার মাল বাস্তবে কমে না; বরং বৃদ্ধি পায়, বরকত হয়।

আর ‘যাকাত’ শব্দের অন্য আরেকটি আভিধানিক অর্থ হলো পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধি। যেহেতু সম্মানিত যাকাত আদায়ের ফলে সম্পদ হারাম হওয়া থেকে পবিত্র হয় এবং জিসমানী ও রূহানী মুহলিকাত বা কলুষতা হতে পবিত্রতা লাভ হয়।সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় ‘হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ’ বা মৌলিক চাহিদা মিটানোর পর অতিরিক্ত যদি কোন মাল বা অর্থ-সম্পদ নিছাব পরিমাণ তথা সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রৌপ্য অথবা এ সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ কারো অধীনে পূর্ণ এক বছর থাকে তাহলে তা থেকে ৪০ ভাগের ১ ভাগ মাল বা অর্থ-সম্পদ সম্মানিত যাকাত বা ছদকা গ্রহণের উপযোগী কোন গরীব, ফকীর-মিসকীন মুসলমানকে তথা পবিত্র শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত খাতে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বিনা স্বার্থে ও বিনা শর্তে প্রদান করাকে সম্মানিত যাকাত বল(মুখতাছরুল কুদূরী, আল হিদায়া)আবার, প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন নিছাব পরিমাণ বর্ধনশীল সম্পদের অধিকারী প্রত্যেক মুসলমান ব্যক্তির পক্ষ থেকে উক্ত নিছাবের উপর পূর্ণ এক চন্দ্র বছর অতিবাহিত হলে, সম্মানিত শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত অংশ নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের মালিক বানিয়ে দেয়াকে সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় সম্মানিত যাকাত বলে। (আদ্দুররুল মুখতার,২/২৫৬-২৫৭)।

সম্মানিত যাকাত কে আদায় করবেন যিনি মালিকে নিছাব তিনি যাকাত আদায় করবেন। সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় ‘হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ’ বা মৌলিক চাহিদা মিটানোর পর অতিরিক্ত সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রৌপ্য অথবা এ সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ যদি থাকে কারো অধীনে থাকে, তাহলে তিনি মালিকে নিছাব।তবে সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান অনুযায়ী উক্ত অতিরিক্ত মাল-সম্পদ বা অর্থ পূর্ণ এক বছর নিজ মালিকানায় থাকে যাকাত ফরয হবে।সম্মানিত যাকাত হিসেবে কতটুকু আদায় করবেন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি তোমার ২০০ দিরহাম তথা সাড়ে ৫২ তোলা (প্রায় ৬০০ গ্রাম) রৌপ্যমুদ্রা থাকে এবং তোমার মালিকানায় এক বছর পূর্ণ হয়, তাহলে তাতে ৫ দিরহাম তথা ২.৫% বা ১৫ গ্রাম রূপা যাকাত ফরয হবে। স্বর্ণের ক্ষেত্রে তোমাকে কোন যাকাত দিতে হবে না, যতক্ষণ না তুমি ২০ দীনার বা মিছকাল তথা সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণের মালিক হও। যখন তোমার নিকট ২০ দীনার বা মিছকাল তথা সাড়ে ৭ তোলা বা প্রায় ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ হবে এবং তাতে এক বছর পূর্ণ হবে, তখন তা থেকে অর্ধ দীনার বা অর্ধ মিছকাল তথা ৪০ ভাগের ১ ভাগ সম্মানিত যাকাত আদায় করতে হবে। এর বেশি যা হবে, তা থেকে এ হিসেবেই দিতে হবে।” (আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৫৭৩),খাজনা, অন্যান্য কর এবং ইনকাম ট্যাক্স দিলেও সম্মানিত যাকাত আদায় করতে হবে : ফিকাহ ও ফতোয়ার শতসিদ্ধ মতানুসারে সরকারী রাজস্ব খাতে খাজনা, কর ও ইনকামট্যাক্স ইত্যাদি দিলেও যাদের উপর সম্মানিত যাকাত ফরয তাদেরকে অবশ্যই সম্মানিত যাকাত ও উশর আলাদাভাবে আদায় করতে হবে।