সাতক্ষীরার কলারোয়ায় করোনার নমুনা পরীক্ষায় মানুষের অনীহা, সংক্রমণের হার বৃদ্ধি

সাতক্ষীরার কলারোয়া দেশের দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চলের একটি সীমান্ত উপজেলা। এ উপজেলার ১৭ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এ উপজেলায় করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এভাইরাস বাড়ার একটিমাত্র কারণ হলো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশী লোকজন কিছু অস্বাধু ব্যক্তিদের সহায়তায় ভারত থেকে অবৈধভাবে প্রায় রাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী টহলরত বিজিবি সদস্যরা উপজেলার কাকডাঙ্গা, তলুইগাছা, মাদরা,হিজল্দী ও চন্দনপুর সীমান্ত থেকে অবৈধভাবে ভারত থেকে আসা প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে থানা পুলিশ ও সীমান্তবর্তী হোমকোরাইনটেইনে সোপর্দ করেছে।

সাতক্ষীরা জেলা ১৩৮ কিলোমিটার ব্যাপী ভারতীয় সীমান্ত হওয়ার কারণে দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক গোটা জেলাব্যাপী চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে এক সপ্তাহ করে ৩ দফায় কঠোর লকডাউন ঘোষনা করেন। যা আগামী ২৪ জুন পর্যন্ত চলবে। এতে খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিন সপ্তাহ অতিবিাহিত হওয়ার পরেও করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমেনি বরং দিন দিন বাড়ছে। ফলে জেলায় লকডাউন আরো বাড়বে কিনা তার জন্য ২৪ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে লকডাউন সফল করতে উপজেলায় জনগনকে সচেতন করতে মাঠে ময়দানে রাত-দিন পুলিশ, ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানরা ব্যাপক ভুমিকা করছেন।

এমনকি প্রত্যেকদিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনগনকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক, হান্ডস্যানিটাইজার ব্যাবহার, বিনা প্রয়োজনে বাইরে না আসা, বাইরে আসলে সামাজিক দুরত্ব বজায়সহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষিত রাখার আহবান জানানো হচ্ছে। তারপরেও মানুষ তার খাদ্যের প্রয়োজনে বাইরে আসছে।

কলারোয়া পৌরসভা ও উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জের মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ (সর্দি, জ্বর, কাশি, মাথা ব্যাথা,গলা ব্যাথা) ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেলেও তারা করোনার টেস্ট করছে না। গ্রাম ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারা বাড়ি চিকিৎসা দিচ্ছে। ফলে অনেকেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে। তাছাড়া করোনা টেস্টের জন্য কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র‌্যাপিড এন্টিজেন কিডস মেশিন থাকা সত্তেও মানুষ সচেতনতার অভাবে আশানুরুপ পরীক্ষা করতে আসছে না।

কলারোয়ার তুলশীডাঙ্গা গ্রামের মোসলেমউদ্দীন, মকবুল হোসেন, আশরাফ হোসেন, নেদু মোড়ল ও আনিছুর রহমানসহ অনেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে আছেন। সরেজমিনে তাদের বাড়িতে গিয়ে করোনা টেস্ট করেননি কেন ? জানতে চাইলে, তারা বলেন, আমরা করোনা টেস্ট করবো না। আমরা বাড়িতে গ্রাম্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছি। যদি করোনা হয় তাহলে আমাদের বাড়ি লকডাইন করে দিবে, তখন অনেক সমস্যা হবে। বিধায় আমরা গোপনে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছি।

তারা আরো বলেন, আমাদের করোনা হয়নি। এটা সিজেনারী জ্বর সর্দি কাশি। কয়েকদিন পরেও সেরে যাবে। তারপরেও যদি শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় তখন হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হবো।

উপজেলার কামারালী গ্রামের শামিম হোসেন, আবুল কালাম করোনার উপসর্গ নিয়ে তারা ভুগছে। তাদের কাছে করোনা টেস্টের কথা জানতে চাইলে তারাও ওই একই কথা বলে।

আবার সীমান্ত এলাকায় অনেকেই বাড়ি লকডাউন করে দিবে ভেবে তারা করোনা টেস্ট না করেই রাতে আধারে গোপনে গিয়ে হোম কোরাইনটেইনে অবস্থান করছে। এভাবে হোমকোরাইনটেইনে গিয়ে অবস্থান করলে সীমান্ত এলাকার ইদ্রিস নামে এক ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হলে দুই দিন পরে তিনি মারা যান বলে জানা গেছে।

করোনা টেস্টে মানুষের অনাগ্রহের কথা জানতে চাইলে কলারোয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জিয়াউর রহমান বলেন, প্রথমে মানুষের সচেতনতার অভাব। সজন্যে তারা করোনা টেস্ট করতে চাই না। ইতোমধ্যে কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও করোনা টেস্টের জন্য র‌্যাপিড এন্টিজেন কিডস মেশিন আসছে। যা দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে করোনা টেস্টের ফলাফল পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন ও থানা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে বারবার মাইকিং করা সত্তে¡ও তারা করোনা টেস্ট করতে আসে না। তাছাড়া আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী ফিল্ডে গিয়ে বুঝাচ্ছে, আমি নিজেও বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে বলছি, তার পরেও মানুষ পরীক্ষা করতে আসছে না। আর কেন আসছে না এটা আমাদের কাছেও প্রশ্নবিদ্ধ। তারপরেও অনেকেই বলছে, করোনা শনাক্ত হলে বাড়ি লকডাউন হবে, বাড়ির অন্য সদস্যরা বাইরে যেতে পারবে না, এরকম নানা সমস্য বা অজুহাত দেখাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, কলারোয়া পৌর সদরসহ আশপাশের লোকজন করোনা টেস্টের জন্য মোটামোটি আসছে। গত সোমবারও আমরা ৫৪ জনকে পরীক্ষা করেছি। আজ পর্যন্ত এ বছর আমরা ১২০৭ জন রোগি পরীক্ষা করেছি। তার মধ্যে ২৯০ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৫ জন মারা গেছে। বাকি ২৮৫ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ঘরে ফিরেছে।