সাময়িক রাজপথ ছাড়লেন জাতীয়করণের আন্দোলনরত শিক্ষকরা

ঢাকায় বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে অরাজক পরিস্থিতির আশঙ্কায় রাজপথ ছাড়লেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে গত ১১ জুলাই থেকে অব্যাহত কর্মসূচিতে হঠাৎ করেই বুধবার সন্ধ্যায় ছন্দপতন ঘটে। নিরাপত্তার স্বার্থে এদিন সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজপথে থাকবেন না শিক্ষকরা। তবে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রেস ক্লাবের সামনেই অবস্থান করবেন। শুক্রবার দুপুর ২টার পর থেকে ফের রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।

বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাউসার আহমেদ জানান, আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে আপাতত আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত করেছি। যেহেতু রাজধানীতে বৃহস্পতিবার বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে তাই যেকোনো অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেই আমরা শিক্ষকদের নিজ নিজ অবস্থানে চলে যেতে বলেছি। তবে শিক্ষকদের শুক্রবার দুপুর ২টার পর পুনরায় প্রেস ক্লাবের সামনে চলে আসতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, এর আগে বিভিন্ন কৌশলে শিক্ষকদের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে শিক্ষকদের একটি ওয়ার্কশপে অংশ নেয়ার জন্যও কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়।

সূত্র জানায়, হঠাৎ টেলিফোন করে শিক্ষা অধিদফতরের কলেজ শাখার পরিচালক ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি শাহেদুল খবির চৌধুরী নেতৃবৃন্দকে বলেন, ২৭ ও ২৮ জুলাই (শুক্র ও শনিবার) জাতীয়করণ নিয়ে ওয়ার্কশপ হবে। আন্দোলন স্থগিত করে সেই ওয়ার্কশপে যোগ দিতে হবে।

মাউশি থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ নিয়ে আলোচনা করতে শিক্ষক নেতাদের নিয়ে ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছে। বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের সেই ওয়ার্কশপে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। তবে মন্ত্রীর সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।

অধ্যক্ষ শেখ কাউছার আহমেদ আরো জানান, এর আগে গত সপ্তাহে শিক্ষামন্ত্রী যখন আমাদের আলোচনায় ডেকেছিলেন তখন আমরা এক বুক আশা নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে দালাল নিযুক্ত করে আমাদের অপদস্ত করা হয়েছে। মন্ত্রী আমাদের কোনো কথাই শোনেননি। এ ওয়ার্কশপ জাতীয়করণের আন্দোলন দমানোর ষড়যন্ত্র। আমরা এ ওয়ার্কশপের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করছি।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা আগামীকাল ও পরশু জাতীয়করণের বিষয়ে দুটি কর্মশালা করছি। যেখানে সব শিক্ষক সংগঠনের নেতারা আসবেন। আমি আশা করবো, আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা সেই কর্মশালায় আসবেন। সেখানে জাতীয়করণের প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে ‘ব্রেইনস্ট্রোম’ করা হবে।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করে প্রেস ক্লাব ও আশপাশের এলাকা। দীর্ঘ ১৬ দিন ধরে যেখানে শিক্ষকদের পদচারণায় মুখর ছিল সেখানে এখন শুনশান নিরবতা চলে আসছে। অনেকটা অচেনা রুপে ফিরেছে প্রেস ক্লাব ও আশপাশের এলাকা।

শিক্ষক নেতৃবৃন্দ জানান, আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষকরা প্রেসক্লাব ছাড়লেও বিভিন্ন সংগঠনের ৬০ জন নেতা প্রেস ক্লাব এলাকায় অবস্থান করবেন। তারা শুক্রবার দুপুর ২টায় পুনরায় সব শিক্ষককে আসতে বলছেন। দাবি আদায়ে ফের রাজপথে অবস্থান নেবেন তারা।