সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার

সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার
-আবদুল হাই ইদ্রিছী


মানুষ সামাজিক জীব। মানুষের জীবন এবং বেড়ে ওঠা কখনো একাকী সম্ভব নয়। সঙ্ঘবদ্ধভাবে সমাজে বসবাস করাই মানুষের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। মানুষ বসবাসের এই সমাজ পরিচালনার জন্য রয়েছে কিছু নিয়ম-নীতি, শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য। যার সবগুলো দিকনির্দেশনাই ইসলামের মধ্যে রয়েছে। ইসলাম আমাদেরকে বাতলে দিয়েছে সরল সঠিক পথ। কিন্তু আমরা আমাদের ধর্মীয় এবং নৈতিকতার শিক্ষাকে বিসর্জন দিয়ে মানুষের মনগড়া মত ও পথে দৌড়াচ্ছি এবং পাশ্চাত্যের কালচার অনুসরণ করে সমাজকে নিয়ে যাচ্ছি অবক্ষয়ের চরম পর্যায়ে। হারাচ্ছি মান-মর্যাদা, এমনকি জীবনও। যত দিন যাচ্ছে ততই মানুষ ধর্মীয় অনুশাসন থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে, তাই তো অন্যায়-অনাচার, ব্যভিচার, অশ্লীলতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়ছে।

সামাজিক অবক্ষয় রোধে ন্যায়বিচারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইসলাম সর্বদা ন্যায় বিচারের নির্দেশ দিয়েছে। স্বার্থ, নৈকট্য যেন বিচারকে প্রভাবিত না করে এটি বিশেষভাবে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। এজন্য বিচারকার্যে অসততা, অন্যায় এবং দুর্নীতি হারাম ও মারাত্মক অপরাধ। বিচারকের জন্য ইনসাফ ও সততা অবলম্বন করা অপরিহার্য। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘কোনো সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনো ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না।’ (সূরা মায়েদা-৮)

আমাদের সমাজে সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না থাকা। কিন্তু আমরা আজ ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যটাই যেন ভুলে গিয়েছি। সর্বক্ষেত্রে আমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট করণে অন্যায়কে অন্যায় বলে স্বীকার করতে না চাওয়ায় অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি এখন অস্বাভাবিকভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে হানাহানি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি সমাজটাকে গ্রাস করে ফেলছে।

এসবের মূলে রয়েছে ন্যায়বিচারের অভাব। কারণ বিচার করবে কারা? আমরা যাদেরকে বিচারক হিসাবে ডাকছি একবার কী ওদের যোগ্যতা ও নৈতিকতা সম্পর্কে একটু চিন্তা করে দেখি? আমাদের এই চিন্তার অভাবে মাথা মোটা মূর্খরা আজ সমাজের মোড়ল ও সালিশ বিচারক হয়ে সমাজে আধিপত্য বিস্তার করছে। সর্বত্র মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে অন্যায় অনাচার। আমাদের দুর্বলতার ফলশ্রুতিতে এসব মাথা মোটা মূর্খ মোড়ল ও সালিশ বিচারকদের কারণে যুগে যুগে অনেক ব্যক্তি ও সমাজ ধ্বংস হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। সমাজের বড় বড় অপরাধীরা বরাবরই ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। যার ফলে ভালো মানুষগুলোও অন্যায় আর দুর্ণীতির যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে ধৈর্য হারা হয়ে নিজেরাও অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। এভাবেই চলছে সমাজ অসুস্থতার চাকা। আর তাই মানুষ দিনে দিনে ভুলে যাচ্ছে শান্তি সুখের কথা।

আমাদের সমাজে ন্যায় বিচার ব্যাহত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো স্বজনপ্রীতি। অথচ ইসলাম ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে কোনো স্বজনপ্রীতির প্রশ্রয় দেয় নাই, এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন- ‘সুবিচার করো, যদিও সে আত্মীয়ও হয়।’ (সুরা আনআম-১৫২)
ন্যায়বিচারের ব্যাপারে মহানবি (সা.) -এর দ্ব্যর্থহীন উক্তি হলো- ‘আজ আমার মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে যায় তবে আমি প্রথমে আমার মেয়ের হাত কেটে দেবো।’ (বুখারি-৬৭৮৮)
পরিশেষে বলতে চাই, সমাজিক অবক্ষয় রোধে আমাদের প্রজন্ম, আমাদের পরিবার ও আমাদের সমাজ অবকাঠামোতে আনতে হবে স্বচ্ছ ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষা। তবেই আমরা একটি উন্নত সুস্থ সমাজে বসবাস করতে পরবো।

আবদুল হাই ইদ্রিছী, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও কবি। সম্পাদক, মাসিক শব্দচর। ই-মেইল: [email protected]