সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও শিক্ষক নিহতের ঘটনায় বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন

সম্প্রতি দেশের হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও সড়ক দুর্ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মশিউর রহমান রাজিব নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি মানববন্ধন করেছে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। প্রথমে শিক্ষক নিহতের ঘটনায় চালকের গ্রেফতার ও পরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলার ঘটনার বিচার দাবি করে মানববন্ধন করেন বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অংশ নেয় উপাচার্য অধ্যাপক ড একিউএম মাহবুবসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গা পূজায় কুমিল্লার একটি মন্ডপে মূর্তির পাশে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাত দেখা দেয়। কুমিল্লা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, রংপুরসহ দেশের অন্যান্য স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘর বাড়ি পোড়ানোসহ মানুষ হত্যার মতো কিছু সহিংস ঘটনা ঘটে।

এদিকে, গত ১৩ অক্টোবর পিরোজপুর থেকে ইজিবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে নজিরপুর নামক স্থানে ইমাদ পরিবহনের ধাক্কায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় বশেমুরবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মশিউর রহমান রাজিব। এ ঘটনায় ইজিবাইক চালক ও নিহত হয় এবং শিক্ষকের স্ত্রী ও পুত্র গুরুতর আহত হয়।

এসব সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষক নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি মানববন্ধন করে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। মানববন্ধনে শিক্ষক নেতারা দুষ্কৃতকারীদের বিচার দাবি করেন।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, “আজকের মানববন্ধনে আমাদের দাবি সড়ক হোক নিরাপদ। কাজী মশিউর রহমান এর মতো আমরা আর কোনো সহকর্মীকে হারাতে চায় না, কোনো মায়ের বুক খালি করতে চায় না, কোনো সন্তানের পিতাকে হারাতে চায় না। এই মানববন্ধনের মাধ্যমে ঘাতক চালকের গ্রেফতার করে তদন্ত মূলক বিচার দাবি জানায়।”

আরেকটি মানববন্ধনে তিনি বলেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্রষ্টা। প্রাচীনকাল থেকে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের মানুষ এ দেশে বাস করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সুযোগ্য নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িকতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই অর্জনকে একটি মহল হিংসায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি ফাটল ধরাতে চাচ্ছে। যার ফলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর বর্বরোচিত হামলা হয়েছে। তিনি সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন এসব মহলকে আইনের আওতায় এনে বিচার করার।”

উপাচার্য অধ্যাপক ড একিউএম মাহবুব বলেন, “কাজী মশিউর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী একজন মানুষ। মাত্র ৭ বছরের চাকরিজীবনে ক্লাস এবং ক্লাসের বাইরে তিনি মন জয় করে নিয়েছেন ছাত্রদের। তার নিহতের ঘটনায় বাস আটক করা হলেও বাসের চালককে এখনো কেন ধরা হলো না জানি না। একটু তৎপর হলেই তাকে ধরা সম্ভব। আশা করি সরকার বিষয়টি দেখবে এবং পুলিশ প্রশাসন অতি দ্রুতই তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনবে। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। কাজী মশিউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে উপাচার্য আরো বলেন, অতিদ্রুত ঘাতক চালককে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক।”

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন, হিন্দুদের উপর হামলা, ঘরবাড়ি পোড়ানো, হত্যা করা সব অনৈসলামিক কাজ। এগুলো ইসলামে নেই। ১৯৪৭ সাল থেকে যে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার বীজ বপন হয়েছিল তা এখন একটি স্বার্থান্বেষী মহল কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি দেশ ও পতাকা দিয়ে যাননি, দিয়ে গেছেন সব ধর্মের মানুষের একত্রে বসবাসের মূলমন্ত্র। আর সেটি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। তিনি মনে করেন এটা একটি রাজনৈতিক ঘটনা। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে না, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী তাদেরই কাজ এই হামলা। আশা করি এই কাজের সাথে জড়িত সকলের বিচার করবে সরকার।