সিলেটে আরিফুলের জন্য সরে দাঁড়ালেন সেলিম

সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ মেয়র প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম দল মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে আরিফুল হক চৌধুরীর বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করে বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কথা জানান।

বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ মেয়র প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম বলেছেন, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশে আমি আজ থেকে নির্বাচন থেকে সরে গেলাম। একইসঙ্গে দল মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে আমি সমর্থন করছি। ধানের শীষে ভোট দিয়ে ৩০ জুলাই বিএনপির প্রার্থীকে জয়যুক্ত করুন।

তিনি বলেন, আমি আমার মায়ের নির্দেশে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলাম। এখন মায়ের সম্মতি নিয়েই নির্বাচন থেকে সরে দাড়ালাম। বক্তব্য দেয়ার সময় সেলিমের পাশেই তার মা ও স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেন, সেলিম ও আরিফের নিরাপত্তা চাই। কারণ আজও সেলিমকে পুলিশ তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিএনপির কৌশলের কাছে পুলিশ পরাজিত হয়।

আমান বলেন, সেলিম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর থেকেই অটোমেটিকভাবে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদ ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদীর, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান ও নেজামে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা আব্দুর রকিব, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, ডা. শাহরিয়ার হোসাইন, সাবেক এমপি কলম উদ্দিন মিলন, মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. নাসিম হোসাইন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেক, বিএনপি নেতা মহবুব চৌধূরী, ইমরান আহমদ চৌধূরী, জিয়াউল গণি আরেফিন জিল্লুর, মিফতা সিদ্দিকী প্রমুখ।

দুপুর দেড়টার দিকে নগরজুড়ে খবর রটে যায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দলের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই মহানগর পুলিশ ও র্যাবের একাধিক দল সেলিমের বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে অবস্থান নেয়।

এরআগে বুধবার দিনগত রাতে সেলিমের বাসায় গিয়েছিলেন বিএনপির একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।

বুধবার রাতে সেলিমের শাহী ঈদগাহের হাজারীবাগস্থ বাসায় যান দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান এবং কেন্দ্রীয় সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম।

তারা সেলিমের মায়ের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনার এক পর্যায়ে নির্বাচন নিয়ে কথা উঠলে সেলিমকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেন, তুমি দলের লোক, তোমাকে দলে ফিরিয়ে আনতেই আমরা এসেছি।

এ সময় বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীও সেলিমের বাসায় উপস্থিত হন। তখন তিনিও বদরুজ্জামান সেলিমকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ করেন। কিন্তু সেলিম নির্বাচনের ব্যাপারে তাদেরকে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। পরে একসঙ্গে সেলিমের বাসায় রাতের খাবার খেয়ে ১২টার দিকে বেরিয়ে আসেন আরিফসহ বিএনপি নেতারা।

এ ব্যাপারে বদরুজ্জামান সেলিম বলেন- আমান উল্লাহ আমান এবং নাজিম উদ্দিন আলমের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। রাজনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আজ তারা সিলেটে এসেছেন তাই রাতের খাবার খেতে আমার বাসায় আসেন। এ সময় আরিফুল হক চৌধুরীও উপস্থিত হন। আলাপকালে তারা আমাকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু আমি সেটি করতে পারব না বলে তাদের জানিয়ে দিয়েছি। আমি নির্বাচন করছি, এটাই ফাইনাল।

কিন্তু সেলিমের রাতের মন্তব্য দুপুরে পাল্টে গেছে। এর আগে বদরুজ্জামান সেলিম আরিফের ব্যাপারে বিভিন্ন রকম অভিযোগ তোলেন। আরিফুল হক চৌধুরীকে দলের জন্য ক্ষতিকারক, দলের সুবিধাভোগী হিসেবেও উল্লেখ করেন। আরিফকে দেয়া দলের মনোনয়ন মেনে নিতে পারেননি বদরুজ্জামান সেলিম। নাগরিক কমিটির ব্যানারে মেয়রপদে প্রার্থী হন তিনি।