সিলেটে গোলাপগঞ্জে ৬ মাস ধরে এলপি গ্যাস বটলিং কারখানা বন্ধ

সিলেটে বেড়েছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারে দাম। বিপাকে বড়েছেন এলপি গ্যাস ব্যবহারি নিন্ম আয়ের লোকজন। সিলেটের গোলাপগঞ্জে ৬ মাস ধরে এলপি গ্যাস বটলিং কারখানা বন্ধ থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়।

এ কারখানা থেকে স্বল্প আয়ের লোকজন মাত্র ৬শ’ টাকা মূল্যে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার কিনতে পারতেন।

গোলাপগঞ্জ চৌমুহনী সংলগ্ন টিকরবাড়ি এলাকায় ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে স্থাপিত হয় কৈলাশটিলা এলপি গ্যাস বটলিং প্ল্যান্ট। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এটি। প্ল্যান্টটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার মেট্রিক টন। এ প্ল্যান্ট থেকে প্রতিদিন উৎপাদন হতো ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার সিলিন্ডার। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কেবল কর বাবদ জমা দিতো প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। কর ব্যয় বাদে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক মুনাফা ছিল ৭/৮ কোটি টাকা। এখন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিষ্ঠানটির পাশেই স্থাপিত আরপিজিসিএল (রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানী) এর কেটিএল প্ল্যান্ট হতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এলপি গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর এলপি গ্যাস বটলিং প্ল্যান্টের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মচঞ্চল প্রতিষ্ঠানটিতে এখন শুনশান নিরবতা। প্রতিদিন যেখানে ট্রাক লরির আসা যাওয়া, শ্রমিকদের হাকডাকে মুখরিত হয়ে থাকতো; সেই প্রতিষ্ঠানে এখন ভুতুড়ে পরিবেশ। তারা বলেন, এই কারখানা একদিন বন্ধ হলেই হুলস্থুল পড়ে যেতো, এখন ৬ মাসের অধিক সময় থেকে বন্ধ হয়ে থাকলেও কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, পেট্রোবাংলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আরপিজিসিএল প্ল্যান্টটি পাশের অপর প্রতিষ্ঠান কৈলাশটিলা এমএসটিই গ্যাস ফিল্ডে খনি থেকে উত্তোলিত এনজিএল (ন্যাচারাল গ্যাস লিকুইউ) থেকে এলপি গ্যাস ও পেট্রোল উৎপাদন করতো। এখন বিপিসি পেট্রোল না নেয়ায় আরপিজিসিএল এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পেট্রোলের পাশাপাশি এলপি গ্যাস উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় প্রতিদিন প্রায় ২০ লক্ষ টাকার এনজিএল পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

গোলাপগঞ্জ এলপি গ্যাস বটলিং প্ল্যান্টের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আব্দুল মুনিম খান জানান, সরকারের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস বটলিং প্ল্যান্ট। কিন্তু, ৬ মাসের উপরে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ। আরপিজিসিএল থেকে এলপি গ্যাস সরবরাহ না পেয়ে তাদের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

কবে নাগাদ প্ল্যান্টটি চালু হতে পারে-এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।

জানা গেছে, এলপি গ্যাস বটলিং প্ল্যান্ট থেকে প্রতিদিন স্থানীয় স্বল্প আয়ের ৫০/৬০টি পরিবারকে সিলিন্ডার গ্যাস স্বল্পমূল্যে দেয়া হতো। জাতীয় পরিচয়পত্র সাপেক্ষে আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় এসব পরিবারকে ৬শ’ টাকায় সাড়ে ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডার দেয়া হতো। এখন সিলিন্ডার না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

স্থানীয় স্বল্প আয়ের গ্রাহক আয়শা সিদ্দিকা, মেহেরুন নেছা, মিছবাহ উদ্দিন, কামরুল ইসলামসহ আরো কয়েক জন জানান, এমনিতেই তাদের পরিবারে আর্থিক অনটন। তার উপর এখন সিলিন্ডার ক্রয় করতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকায়। প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ৬শ’ টাকার সিলিন্ডার গ্যাস ক্রয় করতে পারতেন। এখন তাদের ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে।

তারা বলেন, এমনিতেই করোনার কারণে চাপের মধ্যে আছেন। তার উপর ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তাদের দিশেহারা অবস্থা। না খেয়েতো আর থাকা যায় না। তাই অতিরিক্ত টাকা খরচ করেও গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয় করতে হচ্ছে।